চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

জাতীয় পিঠা উৎসবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : পিঠা ও শীত একে অপরের পরিপূরক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেই উৎসবের আমেজটা টের পাওয়া গেল। পৌষের শীত সন্ধ্যায় হিম বাতাসে উৎসবের আমেজটা নতুন মাত্রা পেল। প্রবেশমুখেই নানা পিঠার সুগন্ধে জিভে জল আসার জোগাড়। স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেল বাঙালি ঐতিহ্যের নানা রকম পিঠা। হৃদয় হরণ, ডিম সুন্দরী, বিবিখানা, চালতা পাতা, জামাই পিঠা, পুলি, ভাঁপা, চিতই, পাটিসাপটা, মাংস পিঠা, নকশা, পাকন, শামুক, ডিম, গোলাপসহ মজার মজার নামের সব পিঠার দেখা মিলল।
এছাড়া প্রায় প্রতিটি স্টলেই তৈরি করা হচ্ছে গরম গরম পিঠা। টাটকা পিঠার স্বাদ চাইলে চুলা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলতে পারেন পছন্দের পিঠাটি। ঝাল পিঠার পাশাপাশি হাঁসের মাংস ও মুরগির মাংসের সঙ্গে রয়েছে চাপটি খাওয়ার ব্যবস্থা। সেটাও তৈরি করে দেয়া হবে একদম চোখের সামনেই। উৎসবে প্রায় ৫০টি স্টলের পিঠার সমাহার যেমন ঠিক তেমনি স্টলের নামেও দেখা গেল বৈচিত্র্য। আর এর মধ্যে নৃত্যের তালে আর গানের সুরে পিঠা কেনা ও খাওয়ায় শিল্পকলা একাডেমি জুড়ে ফুটে উঠেছে চিরচেনা বাঙালি সংস্কৃতির শাশ্বতরূপ।
এর আগে একাডেমির কফি হাউসের মুক্তমঞ্চ থেকে নানা রংয়ের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে ১০ দিনের এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন উদ্বোধনী আয়োজনের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থান থেকে বেলুন পৌষের সাঁঝের আকাশে বেলুন ওড়ান অনুষ্ঠানে আগতরা। জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজনে এটি উৎসবের পঞ্চদশ আসর। জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ, উৎসবের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর সিদ্দিকী, নৃত্যশিক্ষক আমানুল হক, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম ও

শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, পিঠা বাঙালির চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক। বাংলার গ্রামের মা, চাচি, খালা, বোন, ভাবিদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্য নগরজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। আবহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে পিঠা উৎসবকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে জেলা পর্যায়েও আয়োজন করা হবে এই উৎসব। সারাদেশের পিঠা শিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রায় ৫০টি স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের উৎসব।
আতাউর রহমান বলেন, পিঠা উৎসব আমাদের বাঙ্গালিত্বের অর্জন। নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। আমানুল হক বলেন, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন হচ্ছে। এ উৎসব ঐতিহ্যেরই অংশ। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশ পিঠাপুলির দেশ। আর জীবনকে উদযাপনের উৎসব হচ্ছে পিঠা উৎসব। এর পেছনে আমাদের মা, খালা আর নানিরা নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তোলেন পিঠার সৌন্দর্য। পিঠা উৎসবে আসা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী সেজান মাহমুদ বলেন, শীতেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। শহুরে সমাজে সেই ঐতিহ্যের ধারা কিছুটা মলিন হয়ে গেলেও এমন পিঠা উৎসবের আয়োজন বাঙালি ঐতিহ্য রীতিনীতিকে কিছুটা মনে করিয়ে দেয়। উৎসবের আমেজ লাগে মনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থী তানভীর আদর বলেন, ক্লাস আর পরীক্ষার ব্যস্ততায় এবার বাড়িতে বেশি দিন কাটাতে পারিনি মা-বাবার সঙ্গে। শীতের এ সময়টায় খেলাধুলা আর মায়ের হাতের পিঠা খেয়েই অনেকটা সময় পার করে দিতাম। স্মৃতিগুলো মনে পড়লে বিষণ্ন হয়ে উঠতাম। তবে এ পিঠা উৎসব সেই কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। উৎসবের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পিঠা খাওয়া ও বিকিকিনির পাশাপাশি প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে নাচ, গান, আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিক ও পথনাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার শেষ হবে ১০ দিনের এই পিঠা উৎসব। সমাপনী আসরে সেরা পাঁচজন পিঠাশিল্পীকে প্রদান করা হবে সম্মাননা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়