চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

আদালতে বাবার সাক্ষ্য : তিন্নিকে বিয়ের জন্য আমার মাথায় পিস্তল ধরেন অভি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৯ বছর আগে মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নিকে হত্যার আগে তার সঙ্গে বরিশাল-২ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তিন্নির বাবার মাথায় পিস্তল ধরেন মামলাটির একমাত্র আসামি অভি। গতকাল বুধবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম এ সাক্ষ্য দেন। এ ছাড়া নিখোঁজ হওয়ার আগে অভির সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন বলে বাবাকে জানায় তিন্নি।
তিন্নির বাবা বলেন, তিন্নি হত্যার মাসে (২০০২ সালের নভেম্বর) সম্ভবত সেদিন ৬ তারিখ ছিল। আমাকে তিন্নি-পিয়ালদের বাসায় ডাকা হয়। সেখানে তিন্নি, পিয়াল, তার ভাই রিয়ালসহ অভিও ছিল। তিন্নি পিয়ালকে ছেড়ে অভিকে বিয়ে করতে চায় বলে জানায়। আমি এ সম্পর্ক মানি না বলি। এ সময় অভি পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার মাথার ডান পাশে তাক করে বলে- ওই সালার বেটা, তোর সাহস কত আমাকে দেখে নিবি? আমি তখন ভয়ে বলি, অভি ভাই আমি তো আপনারে চিনি নাই। তখন অভি বলে- এখন বুঝছস তো আমি কে? এরপর অভি পিস্তল নামায়। তারপর আমাকে বলে- এই বাসায় আর আসবি না। আমি তিন্নিকে নিয়া হজ করতে যাব। আমি তখন বলি- তুমি কোনো আইনে বিয়ে ছাড়া তিন্নিকে নিয়ে ওমরাহ করতে যাবে? অভি বলে, আমি পিয়ালের কাছ থেকে তালাক নিয়ে নেব। তারপর অভি পিয়ালকে ধমকের সুরে বলল, আমি ২টা ডিভোর্স লেটার পাঠাব। সেগুলো তুমি ব্যাকডেট দিয়ে সিগনেচার করে নেবে।
বাবার বক্তব্যে তিন্নি-অভির সম্পর্ক : তিন্নির বাবা আদালতে বলেন, একদিন তিন্নি আমাকে রাত ৯টার দিকে টেলিফোন (মোবাইল) করে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য বলে। সেখানে গেলে আমাকে বাবু নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই বাবু ভাই-ই হচ্ছেন অভি। পরে আমি তিন্নিকে নিয়ে বাসায় আসার সময় জিজ্ঞাসা করি, অভির সঙ্গে এই ঘুরাঘুরি কেন? তিন্নি বলে, অভির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। অভি আমাকে বিয়ে করবে। আমি তিন্নিকে তার স্বামী পিয়ালের কথা বলি। তাকে বলি তোমার স্বামী আছে। তুমি কীভাবে অভিকে বিয়ে করবে। আমি এমন বিয়ে মানি না। পরে মাথায় পিস্তল ঠেকানোর দিন অভি বলে, রোজার ঈদের পরেই আমি তিন্নিকে বিয়ে করব। মেয়ে আনুস্কা পিয়ালের কাছে থাকবে বলে জানায়। তারপর অভি অদ্ভুত ধরনের চেহারা করে তিন্নিকে চার্জ করে বলে- তুমি কত জনের সঙ্গে রাত যাপন করেছ এটা আমাকে খুলে বল। তিন্নি আমার সামনে সব স্বীকার করে।
অভির সঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়ে নিখোঁজ : তিন্নির বাবা বলেন, এমন ঘটনায় কয়েক দিন লজ্জায় বাবা মেয়ের কোনো কথা হয়নি। এরপর ১০ তারিখ সন্ধ্যার পর আনুমানিক ৭টার সময় আমার বাসায় আসে তিন্নি। দাদাকে সে পা ধরে সালাম করে। আমাকে বলে, বাবা ওই দিনের জন্য আমি দুঃখিত। আমাকে মাফ কর। এরপর আমি তিন্নিকে থাকতে বললে, অভি এসে নাকি ওকে কোনো অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবে বলে জানায়। বাসার কাজের ছেলে মহসিন তিন্নিকে নামিয়ে দেয়। ৯টার সময় তিন্নির বাসার কাজের মেয়ে বীনা আমার বাসায় এসে বলে, তিন্নি আপু কোথায়? অভি ভাই এসে আপুকে না পেয়ে রাগারাগী করছে। আমরা অস্থির হয়ে যাই। রাত ১১টার দিকে আমার আব্বা ও আমার বড় ভাই আমাকে বলে- তোরা রাতে বাসায় থাকিস না, অভি শাসিয়ে গেছে। আব্বা আমাদের কোথাও চলে যেতে বলে। বড় ভাই তখন আমাকে প্রথমে রামপুরা পরে কলাবাগানের বাসায় রেখে আসে। নভেম্বরের ১৫ তারিখ সকাল ৯/১০টার সময় মামাতো ভাই পেপারে তিন্নির লাশের ছবি দেখে আমাকে দেখায়। আমি লাশ দেখে চিনতে পারি। তারপর আমরা কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে লাশ দেখতে চাই। পরদিন পুলিশ জুরাইন কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করলে আমরা চিনতে পারি। পরে আমরা পত্রিকায় এবং মানুষের মুখে শুনতে পারি যে অভিই তিন্নিকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া তিন্নির লাশ যেদিন পত্রিকায় ছাপা হয় সেদিন কলাবাগানে অভির সঙ্গে আমার ভাইয়ের দেখা হয়। অভি বলে, তিন্নিকে খুঁজতে হবে না। এরপর জবানবন্দি শেষ করেন তিন্নির বাবা। গতকাল তিন্নির বাবার এ সাক্ষ্য শেষে তার চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম সাক্ষ্য দেন। তবে তার সাক্ষ্য প্রদান সম্পূর্ণ না হওয়ায় আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন বিচারক। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রায়ের দিন নিখোঁজ থাকা তিন্নির বাবা ও চাচা হঠাৎ করে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে চান। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে রায় পিছিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য গতকালকের দিনটি ধার্য করেন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তিন্নির বাবা হত্যা মামলা দায়ের করলে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলায় ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আলামত জব্দ হয়েছে ২২টি। জানা যায়, গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। জাতীয় পার্টি থেকে হন সংসদ সদস্যও। বর্তমানে তিনি বিদেশে পলাতক রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়