নৌপুলিশের অভিযান : ৩৫ লাখ মিটার জাল জব্দ

আগের সংবাদ

পঞ্চম দফায়ও সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা > ভোটে ঝরল আরো ১১ প্রাণ : পুলিশের গাড়িতে আগুন, আহত শতাধিক, আটক অর্ধশত

পরের সংবাদ

উত্তরের জেলায় শীতের দাপট সূর্য উঁকি দিলেও উত্তাপ নেই : বিপাকে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : রংপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের দাপট বেড়ে গেছে। এসব জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা। ফলে কনকনে শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
রংপুর : গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে এ জেলার ওপর দিয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলো খানিকটা উঁকি দিলেও উত্তাপ নেই। ফলে কনকনে শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর, আদর্শপাড়া, মাস্টারপাড়া, কামারপাড়া, লালবাগসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার দাপটে সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। যান চলাচল ও দৈনন্দিন কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারপাশ সেই সঙ্গে হিমেল বাতাস। দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিলেছে কিছুটা। তবে বিকালের পর থেকে আবারো ঘিরে আছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় কারণে সামান্য দূরেরও কিছু দেখা যাচ্ছে না। অনেক যানবাহনকে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবারের চেয়ে গতকাল তাপমাত্রা কমেছে, সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে। কুয়াশার ঘনত্বও কমেনি। সোমবার রংপুরে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশা শীতের তীব্রতাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে জানুয়ারিতে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তাছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারি সবচেয়ে শীতল মাস। এই সময়ে দেশের তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ মাসেই কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ তিনটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। এর মধ্যে একটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেখানে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সর্বোত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীতে তাপমাত্রা আরো কমেছে। গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীত।
এদিকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে রংপুরে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শীতের শুরুতেই জেলায় শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫২ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জন্য পাওয়া ১ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা থেকে শীতবস্ত্র ক্রয় করে বিতরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
রাজশাহী : রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তিন দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত সোমবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ও ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা আগামী কদিনে আরো কমবে বলেও জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক এ এস এম গাউস-উজ-জামান জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবারো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরো ২-৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহটি মাঝারি থেকে আরো তীব্র হতে পারে। প্রথমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে তাপমাত্রা আরো কমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হতে পারে। তখন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।
এছাড়া উত্তরের জেলা রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজশাহীতে মঙ্গলবার ভোর ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। এরপর সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দিনের মধ্যভাগে কুয়াশা ও মেঘ কেটে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোদ উঠলেও বয়ে চলা ঠাণ্ডা বাতাসে ছিন্নমূল মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় কোল্ড ডায়রিয়া, জ¦র, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে পড়েছে। মানুষ জরুরি কোনো কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সন্ধ্যার আগেই সবাই ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। গত ২-৩ দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। শীত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ আগুন জ¦ালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ¦ালিয়ে সড়কে চলাচল করছে সব ধরনের যানবহন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আকাশে মেঘ কেটে যাওয়ার পর চুয়াডাঙ্গায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে হিমেল বাতাস বইতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার ভোরে কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।
কুড়িগ্রাম : তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। মিলছে না সূর্যের দেখা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ। রাতভর ঝরছে কুয়াশা। মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজারহাট আবহাওয়া অফিস বলছে জেলাজুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
শীত ও কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও চরের বাসিন্দা। খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের মানুষজন। শীতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সকাল থেকেই কাজের সন্ধানে রিকশা, ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িচালক, দিনমজুরসহ ব্যবসায়ীদের শহরে আসতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চলসহ বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজন। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষেরই নেই গরম কাপড়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়