মেয়র প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ২১ লাখ টাকা : নাসিক নির্বাচন

আগের সংবাদ

নতুন কারিকুলাম নিয়ে তালগোল : কাজ চলছে এনজিওর প্রেসক্রিপশনে > কমিটি থেকে ৪ বিশেষজ্ঞের পদত্যাগ > বই ছাপা হয়নি তবু পাইলটিং

পরের সংবাদ

ভোট নিয়ে শঙ্কা তৈমূরের, শেখানো কথা : আইভী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনতু রেজা, নারায়ণগঞ্জ : সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। হাতে তালি, বাদ্যযন্ত্র, ভুভুজেলা বাজিয়ে ছেলে-বুড়ো সবাই নেমে এসেছে রাস্তায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিলে মিছিলে মুখরিত নগরী। একই সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা রাত-দিন চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। গতকাল সোমবারও মূল দুই মেয়র প্রার্থী বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণা এবং গণসংযোগ চালান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী তৈমূর কারো শেখানো কথা বলছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নটাই জানেন না। নারায়ণগঞ্জে কী কী কাজ হচ্ছে, কী উন্নয়ন হচ্ছে সেই সম্পর্কে তার ধারণাই নাই। অন্যদিকে শঙ্কা প্রকাশ করে তৈমূর আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু থাকবে বা থাকতে পারবে কিনা? সে ব্যাপারে আমার শঙ্কা রয়েছে। মুখে বললে হবে না, তারা নিরপেক্ষ থাকবে, সেটা তাদের কাজে প্রমাণ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল নগরীর ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ চালিয়েছেন। সকাল ১০টায় ৭নং ওয়ার্ডের ভাণ্ডারীপুল থেকে এবং বিকাল ৩টায় ৬নং ওয়ার্ডের এসও থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। গণসংযোগকালে ডা. আইভী বলেন, যে প্রার্থী সবুজায়নের কথা বলে জলাশয় ভরাট করতে চান, আপনাদের বুঝতে হবে তিনি দ্বৈত কথা বলছেন। তিনি কারো শেখানো কথা বলছেন। তিনি বুঝে উঠতে পারেননি, নারায়ণগঞ্জে কী কী কাজ হচ্ছে। আমি বিগত পাঁচ দিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমি যেখানেই যাচ্ছি মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী,

আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আমার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাতে বরাবরই সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। যে প্রার্থী বলেছেন তিনিও জানেন, নারায়ণগঞ্জে সব সময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আমি বিশ্বাস করি এবং নির্বাচন কমিশনকেও অনুরোধ করব, বিগত সময়ে যেভাবে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। তারা যেন আমাদের এই রকম সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর কাজ হয়েছে। আমি কখনো মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দেইনি, অন্যায় কাজ করিনি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করিনি। সব কিছু মিলিয়ে জনগণ আমাকে রায় দেবেন। যে চলমান উন্নয়ন কাজগুলো শেষ করা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডের চাহিদা মতো কাজ করে দেয়া, মাঠ করা, শিশুবান্ধব নগরী করাই আমার প্রাধান্য। এদিকে একটা বড় খাল খনন হচ্ছে। এটা সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, এটার কাজ এখনো চলমান। এ রকম চলমান কাজগুলো সম্পন্ন করাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি যে ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে আছি এখানে বড় একটা কবরস্থান আছে, পুকুর আছে। তাদের দাবি ছিল কবরস্থান ঠিক করা, পুকুর সংরক্ষণ ও একটা ঈদগাহ করে দেয়া। কবরস্থানের কাজ করেছি। পুকুরের কাজ চলছে এবং ঈদগাহের টেন্ডার হয়ে গেছে। আমার এবারের সেøাগান হচ্ছে ‘সবুজ শ্যামল নারায়ণগঞ্জ’। এই সবুজ শ্যামল নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি জনগণকে আমার পানির সুব্যবস্থা করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, খালের ব্যাপারে আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বলেছেন যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমাকে বাধা দিয়েছে। হ্যাঁ, তারা বাধা দিয়েছে। তারা এ খাল ভরাট করে রাস্তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি মিটিংয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বলেছি, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী জলাশয় সংরক্ষণ করতে চাচ্ছেন সেহেতু আপনি জলাশয় ভরাট করে রাস্তা করতে পারবেন না। জলাশয়ের ওইপাশে অনেক জায়গা আছে। সেদিক দিয়ে রাস্তা করেন আমি জলাশয়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে দেব। সেই মোতাবেক আমি এখানে জলাশয় সংরক্ষণ করছি, গাছ লাগাচ্ছি। ওই মিটিংয়ের পর তারা আমাকে বাধা দেননি।
অন্যদিকে মেয়র পদপ্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু থাকবে বা থাকতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে আমার শঙ্কা রয়েছে। তারা বলছে, নিরপেক্ষ থাকবে, নির্বাচন মুখের কথায় সুষ্ঠু হবে না। এটা তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তারা বজায় রাখছে কিনা এটা আপনারা টের পাবেন। এবারের নির্বাচন কিন্তু হচ্ছে জনগণ বনাম নৌকা। এটা আপনাদের পরিষ্কার ভাষায় বলে দিলাম। আমি সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে বলছি না, তার ব্যাপারে বলছি, তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছেন, পানি না দিয়েই পানির জন্য দেড় লাখ করে টাকা নিয়েছেন, ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়িয়েছেন, জন্মনিবন্ধনের জটিলতা বেড়েছে এবং টাকা বেশি নিচ্ছে। আমি সত্য বলছি কিনা তা আপনাদের হাতের কাছেই সাক্ষী আছে। যে কাউকেই জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে ঠিকাদাররা একটা সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। ঠিকাদাররা এই সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছে। কোন রাস্তায় কত বরাদ্দ হবে, কোন রাস্তায় বাজেট বাড়াতে হবে তা নির্ধারণ করছেন ঠিকাদাররা। আমরাও বড় বড় সংস্থা চালিয়ে আসছি, কোনো ঠিকাদার আমার কক্ষে ঢুকতে পারে নাই। তারা কী বোঝাতে চায়- ষড়যন্ত্র করে বিএনপির নেতাকর্মীকে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা হবে? বিএনপি তো বিএনপিই আর জনগণ জনগণই। জনগণের একটা নিজস্ব চিন্তা আছে। জাতীয় রাজনীতি এবং স্থানীয় রাজনীতি এক নয়।
তিনি বলেন, আজকে এই সরকার জনগণকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক দিয়ে। স্থানীয় জনগণ কোনো গিনিপিক না। স্থানীয় জনগণ নিজস্ব সত্তা নিয়ে চলে। নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা নিয়েই এগুচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়