মেয়র প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ২১ লাখ টাকা : নাসিক নির্বাচন

আগের সংবাদ

নতুন কারিকুলাম নিয়ে তালগোল : কাজ চলছে এনজিওর প্রেসক্রিপশনে > কমিটি থেকে ৪ বিশেষজ্ঞের পদত্যাগ > বই ছাপা হয়নি তবু পাইলটিং

পরের সংবাদ

বছরের শুরুতে ৬ টাইগারের গর্জন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শেষ কবে জ¦লে উঠেছিল তা ভুলতে বসেছিল সমর্থকরা। ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট সিরিজেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শোচনীয়ভাবে হেরেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে গর্জে উঠল ৬ টাইগার। ৪ ব্যাটসম্যানের ফিফটি ও ২ বোলারের নৈপুণ্যে কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৭৩ রানের লিড মুমিনুল হকদের। বে ওভাল স্টেডিয়ামে টাইগারদের আক্ষেপ শুধু সেঞ্চুরি হাঁকাতে না পারা। ঘরের মাঠে গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে পারফরম্যান্স ছিল তাতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুমিনুল হকদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিল টাইগার সমর্থকরা। বাবর আজমদের বিপক্ষে গত নভেম্বরে চট্টগ্রাম টেস্ট লড়াই করে হেরেছিল টাইগাররা। কিন্তু ডিসেম্বরে সিরিজের শেষ টেস্টে পাকিস্তানের করা ৩০০ রানের জবাবে বাংলাদেশ হেরেছে কিনা ইনিংস ও ৮ রানের ব্যবধানে। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে ২০ টাইগার ব্যাটসম্যান দেড় দিনও ব্যাট করতে পারেনি। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পরে শতভাগ ব্যর্থতায় মোড়ানো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কীভাবে আশার আলো দেখাবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা? তবে নতুন বছরে আলোর মশাল নিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে লড়াইয়ের দ্বার খুলে দিয়েছেন ৬ টাইগার। এখন বাংলাদেশ শুধু ভালো খেলার প্রত্যয়ে নয় বরং বে ওভাল স্টেডিয়ামে জয়ের প্রত্যাশায় আছে।
অজেয় নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রথম হুঙ্কারটা দেন তরুণ টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম। কিউই ব্যাটসম্যানদের প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানের মধ্যে আটকে দেয়ার কাজটি শেষ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পেসারত্রয়ী তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন একপ্রান্ত দিয়ে বোলিং তোপ দাগান। তাদের মধ্যে শরিফুল ছিলেন সমহিমায় উজ্জ্বল, নেন ৩ উইকেট। সমান উইকেট পান স্পিনার মিরাজ। শেষ চার ব্যাটসম্যানের তিনজনকে ফেরান এই অফস্পিনার। শরিফুলের প্রথম শিকার ব্ল্যাক ক্যাপসদের অধিনায়ক টম লাথাম। ১৪ বল মোকাবিলা করে মাত্র ১ রান করা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে লিটনের গøাভসে বন্দি করান শরিফুল। এরপর কিউইদের ব্যাটিংয়ের আস্থার প্রতীক রস টেইলরকে সাদমানের ক্যাচে পরিণত করেন এই তরুণ টাইগার পেসার। ইনিংসে তার তৃতীয় শিকার ৪ রান করা রাচিন রবীন্দ্র। শরিফুল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ভূমিকাটি পালন করেছেন, ওপেনিং জুটি গড়ে উঠতে না দেয়া এবং রস টেইলরকে ম্যাচের হাল ধরতে না দেয়া।
এরপর বোলিংয়ে বাকি কাজটা সেরে নেন টাইগার অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ঘাসের পিচেও স্পিন কাজে লাগিয়ে কীভাবে সাফল্য পেতে হয় সে মন্ত্রও তার ভালোই জানাশোনা। তার শিকার কাইল জেমিসন, টিম সাউদি ও নেইল ওয়েগনার। তবে বোলিংয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হকও। ইনিংসে আধিপত্য করতে থাকা দ্ইু ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ডেভন কনওয়ে ১২২ রানে ও হেনরি নিকলস ৭৫ রান করে তার শিকার হন। দ্বিতীয় দিন মাত্র ৬৩ রানের ব্যবধানে শেষ ৫ উইকেটের পতন হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের।
তবে তখনো শঙ্কা ছিল বোলাররা না হয় কিউইদের বড় সংগ্রহের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কি আরেকটা ইনিংস পরাজয় থেকে রক্ষা করতে পারবে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটে ইনিংস পরাজয়ের তো কোনো শঙ্কায় ছিল না, বরং জয়ের আশা দেখছে টাইগার সমর্থকরা। ব্যাটিংয়ে শুরুটা করেন শরিফুলের সঙ্গে বাংলাদেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ এনে দেয়া তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনারের সঙ্গে কাইল জেমিসনকে নিয়ে গড়া নিউজিল্যান্ড পেস আক্রমণকে বিশ্বসেরা বলাই যায়। দলটির বোলিং কোচ শেন জারগেনসন তো এই চার পেসারে গড়া বোলিং আক্রমণকে তুলনা করেন আশির দশকের ক্যারিবীয় পেস চতুষ্টয়ের সঙ্গে। নিয়ন্ত্রণ, সুইং, সিম, বাউন্স, ভীতি জাগানিয়া শরীরী ভাষা সবই আছে এই চার পেস বোলারের মধ্যে। তাদের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান ২২৮ বল খেলে করেছেন ৭৮ রান। মাহমুদুল প্রায় তিন সেশন ব্যাটিং করায় মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে নিয়ে সাজানো মিডল অর্ডারকে চাপের মুখে ব্যাটিং করতে হয়নি। ধৈর্য ও সাবধানী ব্যাটিংয়ে সাজানো ইনিংসের পেছনের গল্পটাও অদ্ভুত। ২১ বছর বয়সি এই তরুণ ব্যাটসম্যান নাকি কিউই বোলারদের তারকাখ্যাতিকে পাত্তাই দেননি। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে দলের পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড দলের পেস বোলিং আক্রমণ বিশ্বসেরা। ওরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দল। আমি এক্ষেত্রে আমার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেছি। ওদের বোলারদের নাম না দেখে বল দেখে খেলার চেষ্টা করেছি।’ টেস্ট সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদুল।
এর আগে নতুন বছরের শুরুটা দারুণ হলো নাজমুল হোসেন শান্তর। ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি করলেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। নিউজিল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিন নম্বরে নামা শান্ত। পঞ্চাশে পৌঁছতে ৯০ বল খেলেন শান্ত। যেখানে ছিল ৬টি চার ও একটি ছয়ের মার। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি। এছাড়া রয়েছে আরো দুইটি সেঞ্চুরি। শান্তর তৃতীয় সেঞ্চুরি করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান নেইল ওয়েগনার। ১০৯ বলে ৬৪ রান করে তার বলে হেনরি নিকলসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত।
এরপর শান্ত-জয়ের সেঞ্চুরির আক্ষেপ লিটন-মুমিনুলের ব্যাটে ঘুচতে যাচ্ছে এমনটাই ধরে নিয়েছিল টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও হতাশ করেন এই দুই টাইগার। তবে তাদের ১৫৮ রানের জুটির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ কিউইদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪০০ পার করেছে, সেটাও মন্দ কিসে? সেঞ্চুরির দিকে সুন্দরভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের একটি বলে পরাস্ত হয়ে গেলেন মুমিনুল হক। ব্যক্তিগত ৮৮ রানে আউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আফসোস রয়ে গেল মাত্র ১২ রানের জন্য।
এরপর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করেও অল্পের জন্য শতক পাননি লিটন দাস। নিউজিল্যান্ডের বিধ্বংসী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কর্তৃত্ব নিয়েই খেলছিলেন। ১৭৭ বলে ১০টি বাউন্ডারি মেরে নিজের সংগ্রহকে নিয়ে গিয়েছিলেন ৮৬-তে। আরো একটি শতক যখন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, ঠিক তখনই ট্রেন্ট বোল্টের অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বলে খোঁচা দিয়ে আউট হলেন তিনি। শতকের আক্ষেপ থাকলেও লিটনের ইনিংসটি কিন্তু ঠিকই প্রশংসা পেল। বিখ্যাত ক্রিকেট ভাষ্যকার হার্শা ভোগলে মনে করেন, লিটনের মধ্যে যে প্রতিভার প্রতিশ্রæতি ছিল, সেটি এখন ফুল হয়ে ফুটছে।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘খুব ভালো লাগছে দেখে যে লিটনের মধ্যে যে প্রতিশ্রæতি দেখেছিলাম, সেটি এখন ফুল হয়ে ফুটছে।’ কিছুদিন আগেই চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শতকটি পেয়েছেন। টেস্টের শেষ দশ ইনিংসে লিটন দারুণ। একটি সেঞ্চুরি ছাড়াও তিনি করেছেন ৬টি পঞ্চাশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়