মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি উধাও, শীতেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** মার্চের আগেই সংক্রমণের হার বাড়তে পারে ৫ শতাংশের বেশি ** সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত ৬০ আর মৃত্যু ১৫০ শতাংশ বেড়েছে **

সেবিকা দেবনাথ : দেশে রোগী শনাক্তের পর থেকে ক্রমেই দাপট দেখিয়ে সংক্রমণের হার বাড়িয়ে চলেছিল কোভিড-১৯। শীতকালে করোনা আরো মারাত্মক হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। কিন্তু দেশে গত শীত মৌসুমে উল্টোপথেই হেঁটেছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। বলা চলে তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণেই চলে আসে। এর কারণ হিসেবে তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, শীতে আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল (আরএসভি) ও রাইনোভাইরাস প্রবলভাবে থাকে। এগুলোর কারণেই শীতে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি দেখা যায়। এসব ভাইরাস রেসপিরেটরি ভাইরাস। করোনা ভাইরাসও একই। আর ভাইরাসের নিয়ম হচ্ছে, শরীরে যখন একটি ঢোকে, সেটি সহজে অন্য ভাইরাস ঢুকতে দেয় না। ঢুকলেও বের করে করে দেয়। কিন্তু এ বছর আগের হিসাব মিলছে না। মূলত নভেম্বরের পর থেকে দেশে শীতকাল শুরু হয়। তখনো সংক্রমণের হার কম থাকলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে তা বাড়তে থাকে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বেশ কিছুদিন করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল থেকে তা আবার বাড়ছে। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে। ২৭ ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ ২ শতাংশ পার হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে বা কখনো ১ শতাংশের নিচেও ছিল। নভেম্বরে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৭৪৫ আর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৫৫। আর সপ্তাহের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় দেশে করোনা আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যু ১৫০ শতাংশ বেড়েছে।
এবছর শীতে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানাকেই বলছেন। গত বছর মার্চের মাঝামাঝিতে সংক্রমণের হার ৫

শতাংশের বেশি হয়েছিল। এ বছর ওই সময়ের আগেই সংক্রমণের হার ৫ শতাংশে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। এ বছর মধ্য মার্চের আগেই সংক্রমণের হার ৫ শতাংশে পৌঁছবে। ২০২১ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার কমই ছিল। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এসে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। দেশীয় যে ভাইরাস রয়েছে তার উপস্থিতি কমে গিয়ে এমনটি হতে পারে।
ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, আমাদের দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ কোন পর্যায়ে আছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু নতুন এই ধরনটি অতিমাত্রায় সংক্রমণে সক্ষম সেহেতু সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে ওমিক্রন ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের অবস্থা খুব বেশি গুরুতর হচ্ছে তেমনটা নয়। তাই বলে কোনো প্রকার ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুতির কথা বলছি। সেদিকে জোর দিতে বলছি। কিন্তু আমাদের হাতে যে রক্ষাকবচ আছে সেটিকে অগ্রাহ্য করছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়তো সম্ভব হয় না; কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহার এবং হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করার মতো যে কার্যকরী পন্থাটি আছে সেটিও কি আমরা মানছি? তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লকডাউনের পক্ষে নন বিশিষ্ট এই চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদও মনে করেন, গত শীত মৌসুমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি যেমন ছিল এবার ওমিক্রন এসে সেই হিসাবটা বদলে দিচ্ছে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা মনে হয়, আমরা ইতোমধ্যেই সংক্রমণ বৃদ্ধির যে প্রবণতা সেখানে প্রবেশ করেছি। ওমিক্রনের কারণে সামনে দিনগুলোতে সংক্রমণ বাড়বে। কলকাতায় সংক্রমণ বাড়ছে। সেখানে আমাদের দেশের মানুষের যাতায়াত অনেক। সে কারণে আমরা ঝুঁকিতে আছি। এবারো মার্চেই আঘাত করতে পারে করোনা।
ওমিক্রন প্রসঙ্গে বুলেটিনে অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তবে এর ৩ দিন আগে বতসোয়ানায় এটি ধরা পড়ে। আশার কথা হলো, ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সংখ্যা কম। তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। সবার মাস্ক পড়ার কোনো বিকল্প নেই। মাস্ক শুধু নিজের সুরক্ষার জন্যই নয়, অন্যের জন্যও এটি জরুরি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজের ও ৪০ শতাংশ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বুস্টার ডোজও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী ও ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হবে। চলতি মাসে ৪ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়