মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

সে পিছু ডাকে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ছুটির পর তাড়াহুড়া করে বাসায় ফিরছি। ছেলেটা বসে আছে হয়তো। এ সময় শরীরে কুলোয় না, ইচ্ছে করে না পড়াতে। মানা করেছিলাম, কিন্তু তার বাবা মানলো না। অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। শিল্পপতি মানুষ, সম্মানিত। বাসায় পৌঁছে দেখি ছেলেটা বসে আছে।
– কিরে মিহির চলে এসেছো?
হেসে বললো- জ্বী স্যার।
– ঠিক আছে, তুমি অংক কর। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি মোবাইল বাজছে। মিহিরের বাড়ির নম্বর। কানে দিতেই ওপাশ থেকে বাড়ির কাজের লোকের কণ্ঠ শুনলাম। কাঁদছে সে।
– কী হয়েছে, তুমি কাঁদছ কেন?
– স্যার মিহির আর নেই, ছোট সাহেব আর নেই।
– আর নেই মানে? কী যা তা বলছ, কী হয়েছে?
– আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্টে ছোট সাহেব মারা গেছে।
মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে উঠলো। লোকটা পাগল নাকি? তামাশা করার মানুষ পেলো না। এত সাহস, আমার সঙ্গে মজা করে? আজই এমরান সাহেবকে ব্যাপারটা জানাতে হবে। ড্রইং রুমের দিকে গেলাম। এসে দেখি মিহির নেই, একটু আগেইতো ছিল! কোথায় গেলো ছেলেটা? আশপাশে খুঁজেও পেলাম না। কোনো কারণে চলে গেছে হয়তো। তবে সে আগে কখনো যায়নি না বলে। পরে ভাবলাম আজ হয়তো কোনো কারণে চলে গেছে। যাগগে, এমনিতেই পড়াতে ইচ্ছে করছে না।
মাগরিবের নামাজ শেষে বসে বই পড়ছিলাম। মসনবী, বইটি অতুলনীয়। হঠাৎ মসজিদের মাইকে এলান হলো, শোক সংবাদ। আজ আবার কে মারা গেলো? এলানে যা বললো তাতে আমি চমকে উঠলাম। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
‘একটি শোক সংবাদ, শিল্পপতি এমরান চৌধুরীর ছেলে মিহির চৌধুরী আজ বিকাল তিনটায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
কী শুনছি এটা। চারটায় মিহির আমার বাসায় ছিল। তাহলে তিনটায় মরে কীভাবে? কিন্তু না শোনার ভুল নয়, এটাই সত্যি। এলানটি বারবার হলো।
জীবনে কত ছেলে পড়িয়েছি। মিহিরকে কখনো ভুলতে পারব না। সম্ভবত সে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ছিল। জানাজা শেষ করে ঘরে ফিরলাম। ড্রইংরুমে লাইট জ্বলছে। সোফায় বসে মিহিরের কথাই ভাবছি। আহ্ মৃত্যু, আহ্ জীবন। হঠাৎ দেখি পড়ার টেবিলে লাইট জ্বলছে।
যা দেখলাম তাতে আমার হাত-পা শীতল হয়ে গেলো। বসে আছে মিহির, একমনে অংক করছে। অথচ, একটু আগেই তাকে নিজ হাতে কবর দিয়েছি। হার্টবিট বেড়ে গেলো, পা কাঁপছে আমার। ভীষণ ভয় পেয়ে দৌড়ে বের হতে চাইলাম। সে পিছু ডাকে।
-স্যার আমার অংক করা শেষ, দেখবেন না?

হাসান মাহমুদ বজ্র : চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়