মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

ভোগান্তির মধ্যেও জমে উঠছে বাণিজ্যমেলা, তবে…

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর পূর্বাচলে এ বছর প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গত শনিবার থেকে মেলা শুরু হলেও দ্বিতীয় দিনেও বেশির ভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত হয়নি। এখনো চলছে নির্মাণ আর গোছানোর কাজ। দর্শনার্থী কম, তাই কুড়িল থেকে বাণিজ্যমেলার উদ্দেশে বাসও ছাড়ছে কম। একটি বাস ছেড়ে যাওয়ার পর আরেকটি বাস ছাড়ছে আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা পর। গতকাল রবিবার মেলা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, কিছুটা দূরে হলেও ভবিষ্যতে বাণিজ্যমেলা জমজমাট হবে। কারণ এটি ঢাকার সম্প্রসারিত একটি এলাকা। ইতোমধ্যে যোগাযোগসহ এ এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা মেরামতের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
মহামারি করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার হাতছানি নিয়ে গত শনিবার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাসব্যাপী চলবে এ মেলা। শেরেবাংলা নগরের চিরচেনা ঠিকানা ছেড়ে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ডিআইটিএফের ২৬তম আসর বসেছে। এটিকেই বাণিজ্যমেলার স্থায়ী ঠিকানা বলছে সরকার। তবে নতুন ঠিকানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা খানিকটা কম হওয়ার শঙ্কাও আছে। এখনো মেলা আঙিনায় স্টল প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ চলছে। আবার এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলায় স্টল সাজিয়ে বসেছেন ওয়ালটন। মেলায় প্রিমিয়াম ৫-৬ প্যাভিলিয়ান স্টলে সাজানো-গোছানো ওয়ালটন এবারে ভিন্নধর্মী আয়োজন নিয়ে এসেছেন বলে জানান কোম্পানির এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ও প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ মো. সাব্বির আহমেদ শাকিল।
ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, মেলার দ্বিতীয় দিন হিসেবে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। একটু রুরাল এরিয়া হলেও ভালো সাড়া পাচ্ছি। তিনি বলেন, ওয়ালটন সব সময়ই ইউনিক কিছু চিন্তা করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো যেসব পণ্য নিয়ে এসেছি, তাতে দর্শকরা বুঝতে পারবে যে ওয়ালটনপণ্য টেকনিক্যালি কতটা এগিয়েছে। আমরা এ বছরে মেলায় পণ্য বিক্রি নয়, প্রদর্শন করছি। আমাদের এখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সিস্টার কনসার্ন ইটকার্ডেল মাধ্যমে বা ওয়ালকার্ডের মাধ্যমে ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে থাকি। মেলা থেকে অর্ডার করলেও পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ ছাড়। এখানে ওয়ালকার্ড থেকে ডিআইটিএফ একটি অফার রয়েছে। এখান থেকে কাস্টমার অফার করলে ২-৩ দিনের মধ্যে আমরা পণ্য ফ্রি হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় দিনেই ওয়ালকার্ডে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নতুন নতুন পণ্য আমরা অনলাইনের মাধ্যমে জানাচ্ছি।
গতকাল মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে

দেখছেন দর্শনার্থীরা। মগবাজার থেকে আসা দর্শনার্থী তূর্ণা বলেন, কয়েক বছর পরে কাজিনদের সঙ্গে মেলায় এসেছি। আমি খুবই এক্সাইটেড। যদিও অনেক স্টল এখনো সাজানো শেষ হয়নি। এরপরও মনে হচ্ছে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চেয়ে এখানকার আয়োজন বেশ জাঁকজমকপূর্ণই হবে। তিনি বলেন, খোলামেলা পরিসর। এক স্টল থেকে আরেক স্টলের দূরত্ব। সব কিছু মিলে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেলার আয়োজন করেছে ইপিবি। যেমনটা চীন, জার্মানিসহ বিশ্বের বড় বড় মেলা আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো করে থাকে। তবে মেলাপ্রাঙ্গণ একটু দূরে হওয়াতে যাতায়াত কিছুটা বোরিং বলে জানান তিনি।
তূর্ণার মতো আরো অনেক দর্শনার্থী বলছেন, মেলা কর্তৃপক্ষ কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০টি বিআরটিসি বাস দিয়েছে। এরপরও রাজধানী থেকে দূরে হওয়ায় পরিবহনের ভোগান্তিতেও পড়েছেন দর্শনার্থীরা। স্বস্তির জায়গা হলো মেলায় প্রবেশে শেরেবাংলা নগরে যে ধরনের ভিড় আর যানজটের কবলে পড়তে হতো, এবার সেটা নেই।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এ পথে বেশ কিছু রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। তবে নির্মাণাধীন ৫টি আন্ডারপাস এলাকার রাস্তা এখনো ভাঙা। এছাড়া রাস্তার পাশেই চলছে ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্প। সব মিলিয়ে নতুন স্থানে শুরু হওয়া বাণিজ্যমেলায় পৌঁছাতে বেশ ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। আধ ঘণ্টার পথে সময় যাচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। তবে মেলার স্থান এবার একটু দূরে হওয়ায় দর্শনার্থীদের আনা-নেয়ার জন্য কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
গতকাল দুপুর একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কুড়িল থেকে বাণিজ্যমেলার উদ্দেশে ৪টি বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেটের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। নির্ধারিত সময়ে বাস না ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক দর্শনার্থী। তারা সময়মতো মেলায় যেতে পারছেন না। তবে কুড়িল থেকে বাস ছাড়ার পর মাত্র ৩৫-৪০ মিনিটে বাণিজ্যমেলার গেটে পৌঁছানো যাচ্ছে। এটা যাত্রীদের জন্য স্বস্তির খবর।
বাণিজ্যমেলা উপলক্ষে ৩০টি স্পেশাল বাস চালু করা হয়েছে। এসব বাসে কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৩০ টাকা। এছাড়া মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকে বিআরটিসি বাস মেলার এলাকা পর্যন্ত চলাচল করছে। আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো জানিয়েছে, এ ডেডিকেটেড সার্ভিস মেলা চলা পর্যন্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারই প্রথম স্থায়ী ভেন্যুতে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে এই মেলা হতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়