মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

বিশিষ্ট তবলাচার্য মদনগোপাল দাস আর নেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তবলাচার্য মদনগোপাল দাস, এক সময় যিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গন মুখর করে রেখেছিলেন তবলার ছন্দে। অসংখ্য শিল্পী যার হাত ধরেই উঠে এসেছে সংগীতাঙ্গনে। ছায়ানটের যাত্রা শুরুর সঙ্গী ছিলেন তিনি। সেই গুণী শিল্পী মদনগোপাল দাস অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন। গতকাল রবিবার ভোর ৬টা ৫৫ মিনিটে পুরান ঢাকার নারিন্দার ‘বাসনা ভিলা’য় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মদনগোপাল দাসের মৃত্যুর খবরটি ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি স্ত্রী পুষ্প দাস, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এই বরেণ্যজনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট। রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে তার শেষ কৃত্যসম্পন্ন হয়।
খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, অনেক মেধাবী একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। তার যৌবনে শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকপালরা তার তবলাবাদকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাদের আশীর্বাদ পেয়েছেন। এরপর থেকে মদনগোপাল দাস আর থেমে ছিলেন না। তার চলে যাওয়ায় সত্যিকার অর্থেই সাংস্কৃতিক অঙ্গন একজন গুণী শিল্পীকে হারাল। এ শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবে না।
মদনগোপাল দাস গত ২০১২ সালের মার্চে শিল্পকলা একাডেমির একটি উচ্চাঙ্গ সংগীতের তবলা বাজাতে বাজাতে অনুষ্ঠানমঞ্চেই উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই এই শিল্পীর নিত্যসঙ্গী পাঁচ হাত বাই চার ফুট বিছানা ও হুইল চেয়ার। বাম হাত ও পা অবশ। এরপর থেকেই আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। হুইল চেয়ারে বসেই সময় কেটেছে। আর্থিক অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করা সম্ভব হয়নি। অসুখের বেড়াজালে দুঃসহ জীবন কেটেছে মদনগোপাল দাসের।
মদনগোপাল দাসের জন্ম ১৯৩৯ সালে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারিন্দায়। ছোটবেলা থেকেই তবলার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ। ১৯৫৬ সালে তবলায় প্রথম হাতেখড়ি নেন দাদু পণ্ডিত ভগীরত চন্দ্র দাসের কাছে। ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তবলায় তালিম নেন ভারতের রামপুরের বিখ্যাত ওস্তাদ ড. মসিৎ খাঁর শিষ্য ওস্তাদ সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে শিষ্য পরম্পরায়। তবলা সংগতদানের বিষয়ে ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, পণ্ডিত বারীণ মজুমদার এবং ওস্তাদ মীর কাশেম খানের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক জিনিস শেখেন তিনি। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় মোহাম্মদপুর টাউন হলে পণ্ডিত জগদানন্দ বড়–য়ার পরিচালনায় সাত দিনের এক সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মেধার পরিচয় দিয়ে প্রথম হন।
১৯৮৫ সালে ঢাকার বিখ্যাত সেতার বাদক ওস্তাদ খুরশিদ খানের সহযোগিতায় জার্মানি সফরে যান মদনগোপাল দাস। সেখানেও তবলার বোলে ঐন্দ্রজালিক সুর-মূর্ছনায় প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়া জার্মানদের মনে তবলার আস্বাদ দেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী ওস্তাদ মতিউল হক খান, ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, সরোদবাদক ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান, উচ্চাঙ্গ কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে ওস্তাদ আখতার সাদমানী, সৈয়দ জাকির হোসেন, ইলা মজুমদার, ফেরদৌসী রহমান, নিলুফার ইয়াসমীন, সন্জীদা খাতুন, রবিউল হোসেন, অমরেশ রায়চৌধুরী, নিরোদবরণ বড়–য়া, পণ্ডিত রামকানাই দাসকে তবলায় সংগত দিয়েছেন আজন্ম ত্যাগী এই গুণী তবলাবাদক। তবলাচার্য মদনগোপাল দাসকে ছায়ানট আজীবন সম্মাননা প্রদান করেছে। এছাড়া পেয়েছেন শিল্পকলা পদক, নজরুল একাডেমি সম্মাননা, সুরধনী সংগীত নিকেতন, হিন্দোল সাংস্কৃতিক একাডেমি, সুরতীর্থ, পদক্ষেপ বাংলাদেশ, শুদ্ধ সংগীত একাডেমি পুরস্কার। মদনগোপাল দাস শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি ও আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতনে তালযন্ত্র (তবলা) প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বড় ছেলে অজয় দাস জুয়েলও একজন তবলাবাদক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়