মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

খেলাপি ঋণের রাশ টানা জরুরি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চাঁদে যেমন কলঙ্ক থাকে তেমনি খেলাপি ঋণ ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়, যদি সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যেমন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ২ শতাংশ পর্যন্ত যদি ঋণখেলাপি থাকে তবে সেটাকে সহনীয় মাত্রার খেলাপি ঋণ বলে মনে করা হয়। এর বেশি খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের জন্য দুর্বিষহ। খেলাপি ঋণ নিজে তো আয় করতেই পারে না বরং এটি ভালো ঋণের মাধ্যমে অর্জিত আয়কেও গ্রাস করে নেয়। অর্থাৎ এটি দুইভাবে ব্যাংকের ক্ষতি করে, প্রথমত সে নিজে অনুপার্জনক্রম হয়ে যায় এবং দ্বিতীয়ত ভালো ঋণের আয়ে ভাগ বসায়। তাই খেলাপি ঋণ ব্যাংকের সদা সর্বদা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খেলাপি ঋণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা যায় ঋণের শ্রেণিবিন্যাস নীতি শিথিল করা সত্ত্বেও দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যা ৯ মাস আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ ও গত এক বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনা ভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পরপরই ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখনো ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। অর্থনীতির জন্য এটি একটি অশুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ এবং আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সাম্প্রতিককালে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকের শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা তৃতীয় প্রান্তিকের শেষে বেড়ে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সরকারি ব্যাংকে ৪৭ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ দুই হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।
ব্যাংকারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানা গেছে করোনা মহামারির কারণে অনেক ব্যবসা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে অনেকেই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এছাড়া অনেক ভালো ব্যবসায়ী (যারা ভালো ব্যবসা করেছেন) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও ঋণ পরিশোধ করছেন না যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তারা ভাবছেন ঋণ পরিশোধের সুবিধা আরো বাড়তে পারে। তাই ঋণ পরিশোধ না করে আবারো নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। অন্যদিকে গ্রাহকরা অনেক দিন থেকে ঋণ পরিশোধ না করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, যার জন্য খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সরকারের দেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা যদি আর না বাড়ে তবে জানুয়ারিতে খেলাপি ঋণ কোন দিকে যাবে তা আরো স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।
অন্য কথায় বলা যায় খেলাপি ঋণ ক্যান্সারের মতো। যত দ্রুত সম্ভব এর বিস্তার রোধ করতে হবে। প্রথমত নতুন করে যেন আর ঋণখেলাপি না হয় তার জন্য পরিকল্পিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে অর্থাৎ ভালো গ্রাহক নির্বাচনে ঋণ দাতাদের সচেষ্ট হতে হবে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে পথ খুঁজতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে বিশেষ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার ব্যবস্থা করা। খেলাপি ঋণ আদায়কারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অনিচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের জন্য পুনরায় ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের জন্য নতুন করে ব্যবসার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষেত্রে চীন যে ব্যবস্থা নিয়েছে আমাদের দেশে সেই রকম কিছু করা যেতে পারে। আমাদের দেশের খেলাপি ঋণ দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় ধরে চলে আসা এক পুঞ্জীভূত সমস্যা। তাই রাতারাতি এই সমস্যার সমাধান হয়তো সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তদুপরি এটি এখন এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কোনো একটি ব্যাংকের একার পক্ষে এখন আর তার খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তদুপরি সরকারের সক্রিয় এবং আন্তরিক সহযোগিতায় এ ক্ষেত্রে একান্ত আবশ্যক।
আনোয়ার ফারুক তালুকদার (শামীম)
অর্থনীতি বিশ্লেষক
ধানমন্ডি, ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়