নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বাড়ছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হবে। ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকেই নতুন হারে প্রণোদনা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগে এ হার ছিল ২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে এখন থেকে পাবেন ১০২ টাকা ৫০ পয়সা।
বৈধপথ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রেমিট্যান্সের ওপর বাড়তি এই প্রণোদনা প্রবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নববর্ষের বিশেষ উপহার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১৭২টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। প্রতিবছর তারা আত্মীয়স্বজনের কাছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বা (প্রতি ইউএস ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর ফলে চলতি অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ২ শতাংশ  প্রণোদনা দিয়ে আসছে। অতিমারি করোনার কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রেমিট্যান্স আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি তৈরি হয়। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৫৫ কোটি ডলার, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সোয়া ২৫ শতাংশ এবং আগের মাসের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের সর্বশেষ যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর) ১৪৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে বিদায়ী ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে দেশে। অর্থাৎ করোনার চাপ সামলে এখন আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে শুরু করেছে রেমিট্যান্স আহরণ।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স এলে অর্থনীতি গতিশীল হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। এরপর থেকে রেমিট্যান্স ১৪ বিলিয়ন থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। আশা করা হচ্ছে, এ বছর ২৬ বিলিয়ন ডলার আসবে। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তবে এটাকে সঠিক চ্যানেলে আনার চেষ্টা করছি।
রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছিল না, কারণ সেটা ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাচ্ছিল। সেই চ্যানেলটাকে অনুৎসাহিত করতে এবং ফরমাল চ্যানেলেই পুরোটা অর্জন করতে চাই। সেজন্যই প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বিবেচনায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে সরকারকর্তৃক ২ শতাংশ প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার বিদ্যমান হার বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫-এ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বর্ধিত এ হার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জানুয়ারি, ২০২২ হতে কার্যকর হবে। সরকারের এ নীতি সহায়তার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আহরিত রেমিট্যান্সের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের আহরিত রেমিট্যান্সের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠক থেকেই অর্থমন্ত্রী রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বাড়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এই প্রণোদনা প্রবাসীদের জন্য নববর্ষের বিশেষ উপহার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ সবচেয়ে সেরা জায়গা। সেটা বিবেচনা করতে হবে। এগুলো (মূল্যস্ফীতি) আমাদের এখানে নেই। গত ১৫ বছর ধরে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের নিচে।
অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ’ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। নির্ধারিত ৩টি শর্তপূরণ করায় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করেছে।
সবশেষ ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করেছে। এতে আগামী ৫ বছর পর ২০২৬ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়