নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির সংলাপ : যাচ্ছে না সিপিবি ইসলামী আন্দোলন ও গণফোরাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেলেও সংলাপে যাচ্ছে না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণফোরাম। গত ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে যে ৫টি দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয় তার মধ্যে এ তিনটি দল ছিল। গতকাল শনিবার সিপিবির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো চিঠিতে সংলাপে অংশ না নেয়ার এ অপারগতার বিষয়ে জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেটাই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন ব্যবস্থার মৌলিক গলদ দূর করতে না পারলে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। এ মৌলিক বিবেচনা থেকে সিপিবি নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’সহ ৫৩টি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের সুপারিশমালা ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আপনার কাছে দিয়েছিল। এ অবস্থায় হুবহু একই আলোচ্যসূচিতে ও একই প্রকরণের আরেকটি সংলাপে যোগ দিয়ে সিপিবির নতুন কোনো কথা বলার নেই। সে কারণে তাতে যোগ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি না।
সিপিবি বলেছে, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সংবিধানসম্মতভাবে একটি নির্বাচন কমিশন মনোনীত করা জরুরি বিধায় আপনার কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, আপনি জাতীয় সংসদকে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে আগামী এক মাসের ভেতরে ‘নির্বাচন কমিশন আইন’ প্রণয়ন করে তা স্বাক্ষরের জন্য আপনার কাছে পাঠাতে বলুন। তাহলে নির্বাচন কমিশন মনোনয়নের আগে সে বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আপনার বৈঠকের প্রয়োজন পড়বে না।
একইভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে চলমান সংলাপে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। গতকাল দুপুরে পুরানা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মুফতি রেজাউল বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে দেশের চিন্তাশীল মহল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ জনগণের মাঝে আমরা কোনো আগ্রই দেখতে পাচ্ছি না। বরং জনগণ মনে করছে, রাষ্ট্রপতির সংলাপে ফলপ্রসূ কিছু হবে না। অতীতের দুটি সংলাপ যেমন জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, চলমান সংলাপেও এর ব্যতিক্রম কিছু হবে বলে জনগণ মনে করে না। অতএব, জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে গিয়ে এমন একটি আবেদনহীন ও তাৎপর্যহীন সংলাপে অংশ নেয়াটা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সঙ্গত মনে করে না।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, হতাশাজনক ব্যাপার হলো, এই ইসির নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় এসব কলঙ্কময় নির্বাচনের দায়ে তারই গঠিত কমিশনকে কোনো রকম জবাবদিহির আওতায় আনেননি, কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। ফলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকে আমাদের কাছে অর্থহীন মনে হয়।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ একটি তামাশা মাত্র দাবি করে গণফোরামের একাংশের নেতারা বলেছেন, এই সংলাপের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে না।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ আজ কোথায়? গণতন্ত্র নিখোঁজ।
তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ এই সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কীভাবে সংবিধানবহির্ভূত ‘সার্চ কমিটি’ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের (২) এর সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ শুধু নয়, এটা সংবিধানকে উপেক্ষা এবং পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে কি?
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সংবিধানের তৃতীয় তফসিল ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথ নিয়েছেন, ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।’ ১১৮ অনুচ্ছেদের উল্লেখিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি তার শপথ যথার্থভাবে পালন করছেন কিনা- সে প্রশ্ন যে কোনো নাগরিক উত্থাপন করতে পারেন। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত ‘সংলাপের নাটক’ বাংলাদেশে ইতোপূর্বে দুবার অনুষ্ঠিত হয়েছে, এই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে গণফোরাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ একটি তামাশা মাত্র। যার মাধ্যমে কোনো কাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। তাই সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়