নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

মহামারিতেও বেড়েছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : মহামারি করোনার প্রভাবের পাশাপাশি ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। অর্থাৎ করোনার প্রভাব কাটিয়ে দেশের ব্যাংক খাত বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে নীতি সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ছাড় অন্যতম ভূমিকা রেখেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী ২০২১ সাল শেষে দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তবে সাময়িক পরিচালন মুনাফা বাড়লেও ভবিষ্যতে তা ব্যাংকের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে এ পরিচালন মুনাফা। বরাবরের মতোই এবারো দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি সদ্য সমাপ্ত বছরে ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। যা ২০২০ সাল শেষে ছিল ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এক বছরে মুনাফা ৮০ কোটি টাকা বেড়েছে।
ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্য মতে- পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল, এক্সিম, এনসিসি, ঢাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, প্রিমিয়ার, শাহজালাল ইসলামী, যমুনা, এসআইবিএল ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো এখনো পর্যন্ত নিজেদের বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। এজন্য এ ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার চিত্র জানা সম্ভব হয়নি।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ পরিশোধে নীতি ছাড়ের কারণে অনেক ব্যাংকেরই আদায় কমেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ছাড়ের কারণে বেশকিছু ব্যাংকে অনাদায়ী সুদও আয়ের খাতে নিয়ে আসায় পরিচালন মুনাফা বেশি দেখাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আমানতের সুদহার সর্বনি¤েœ নামিয়ে আনার সুফলও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের কমিশন থেকে প্রাপ্ত আয় ও পুঁজিবাজার থেকে পাওয়া মুনাফার প্রভাব বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রতিফলিত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় উল্লম্ফন হলেও দীর্ঘমেয়াদে দেশের ব্যাংক খাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে, এটা ঠিক নয়। কেননা ২০২১ সালে দেশে করোনার ভয়াবহতা বিরাজ করেছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তায় বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। ২০১৯ সালে পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণই খেলাপি করা হয়নি। ২০২০ সালে ২৫ শতাংশ পরিশোধে খেলাপি না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এসব ছাড়ের ফলে অধিকাংশ ব্যাংকই প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি। এর ফলে আগামী বছরে এসব ব্যাংক ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের জন্য বড় বিষয় নয়। এখন সময় হলো সম্পদের গুণগত মান ঠিক রেখে মূলধনের ভিত শক্তিশালী রাখা।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ও কর-পরবর্তী মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। গত ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর সদ্য সমাপ্ত বছরের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব শেষ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পূবালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ শেষে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে মুনাফার পরিমাণ ছিল ৮৭০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি। রূপালী ব্যাংকের মুনাফা ১৫০ কোটি, যা এক বছর আগে ছিল ১৫৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৪৮ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৯২০ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৭৪১ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফ হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭১৭ কোটি টাকায়, গত বছর এই মুনাফার পরিামাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা। এনআরবি কামার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ৩২৩ কোটি  টাকা।। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক মুনাফা করেছে ২১০ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১৫২ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১২৩ কোটি, গত বছর ছিল ৯৪ কোটি টাকা। মেঘনা ব্য্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ৭৩ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৬২ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ১২৫ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা, যা ২০২০ সাল শেষে মুনাফা করেছিল ৩১৭ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৭১৭ কোটি টাকা, ২০২০ সাল শেষে মুনাফা করেছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক ২০২১ সাল শেষে মুনাফা করেছে ৭৫০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়