নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

প্রতিশ্রæতি রাখেনি জাবির হল কর্তৃপক্ষ : গণরুমেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নূর হাছান নাঈম, জাবি থেকে : মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ ১৯ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সে সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হবে না জানিয়ে প্রথমে হলে ওঠানো হয়নি। এসময় যেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে তাদের কোনোভাবেই হলে না ওঠার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করলেও প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে হলে সিট না পেয়ে গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গণরুমেই থাকতে হচ্ছে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের। এদিকে করোনার নতুন সংক্রমণ ওমিক্রনের ঝুঁকি বাড়ায় আতঙ্ক-উদ্বেগ দেখা দিয়েছে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে ১৬টি হলের মধ্যে ছেলেদের জন্য ৮টি হলে মোট আসন সংখ্যা ৪৫৬৮টি। এর মধ্যে আল বেরুনী হলে ২৫৬টি আসন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৪০৪টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হলে ৮৬৮টি, মওলানা ভাসানী হলে ৭৬৮টি, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৭১৬টি, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৩৯৬টি, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৪০টি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৫২০টি আসন রয়েছে।
অন্যদিকে মেয়েদের জন্য ৮টি হলে মোট আসন রয়েছে ৩৮১০টি। যার মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৩৪০টি, ফজিলাতুন্নেসা হলে ২০৪টি, প্রীতিলতা হলে ৪৮০টি, জাহানারা ঈমাম হলে ৪৯০টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫১২টি, শেখ হাসিনা হলে ৬৩৬টি, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৫২০টি এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬৩৮টি আসন রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় প্রত্যেকটি হলে আসন সংখ্যার অধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থী অনুপাতে হল সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার কাজ হয়নি বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের বিভিন্ন কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ে ফাটল সৃৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। শহীদ সালাম-বরকত হলের ওয়াশরুম এবং টয়লেটের বেশকিছু ব্যবহার অনুপযোগী। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। ছাত্ররা সরাসরি ট্যাংকের পানি পান করছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ছাত্রদের হলগুলোতে সিট বিন্যাসের বিষয়টি ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারা রুমে থাকবে এমনকি কোন রুমে কতজন থাকবে সবই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনায় নির্ধারিত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি প্যানেলের নেতাকর্মীরা হলের কক্ষগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে তাদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করছে। অন্যদিকে চলমান সিট সংকট সত্ত্বেও ছাত্রলীগের কিছু নেতা হলে একাই পুরো রুম নিয়ে থাকছেন এমন চিত্রও দেখা গেছে।
শাখা ছাত্রলীগের ৪২তম ব্যাচের পদপ্রত্যাশী এক নেতা পত্রিকায় নাম না প্রকাশে শর্তে বলেন, হল প্রশাসন তো হলে শুধু ফরমালিটি রক্ষা করে। শিক্ষার্থীরা তো তাদের সমস্যা সমাধানে প্রভোস্ট-ওয়ার্ডেনকে পায় না। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট সংকট সমাধানে হল ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মিনি গণরুমে অবস্থান করা প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী আকন্দ (ছদ্মনাম) আক্ষেপের সুরে বলেন, চলতি বছরের ১১ অক্টোবর হল খুললেও আমাদের গণরুমের দোহাই দিয়ে হলে তোলা হয়নি। সিঙ্গেল সিটের আশা দিয়ে দেড় মাস বিলম্ব করে অবশেষে গত ৩০ নভেম্বর মিনি গণরুমে তোলা হয়েছে। কিন্তু রুমে আসার পর দেখি এখানে গণরুমের চেয়েও খারাপ অবস্থা। চারজনের একরুমে ১২ থেকে ১৩ জন করে থাকতে হচ্ছে। নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমাদের মিথ্যা একটা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে আমরা মাত্র কয়েকদিন থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ বন্ধ হওয়াতে দীর্ঘদিন বাইরে থাকায় মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। সে জায়গায় আমরা আশা করেছি প্রশাসন আমাদের হলে স্বাগত জানাবে। কিন্তু গণরুমের দোহাই দিয়ে দেড় মাস পর ঘিঞ্জি অবস্থায় শীতের মধ্যে এখন ফ্লোরে থাকছি। এ অবস্থায় করোনার মধ্যে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কায় আছি। এখানে শিক্ষা উপযোগী কোনো পরিবেশ নেই। তাছাড়া হলের সিনিয়রদের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় রিডিংরুমে যেতে পারছি না। অন্যদিকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতেও জায়গা পাওয়া যায় না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের লেখাপড়ায়।
গণরুম থাকবে না এমন প্রতিশ্রæতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফের গণরুমে ওঠানোর প্রসঙ্গে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে পারিনি একথা সত্য। হল খোলার পর নির্দেশনা না মেনে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হওয়া অনেকে হলে ওঠায় নতুনরা সিট পাচ্ছে না। তবে গাদাগাদি করে গণরুমে থাকার বিষয়ে আমি অবগত নই। গণরুমে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এ দায় শুধু আমাদের একার নয়, সিনিয়র শিক্ষার্র্থীদেরও রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়