নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় : সেশনজটের ধাক্কা থেকে বাঁচায় অনলাইন ক্লাস

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : সব কিছু চলছিল স্বাভাবিকভাবে। রাজপথে রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-অবরোধ না থাকায় নির্বিঘেœ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ২০২০ সালের মার্চে আঘাত হানে করোনার ছোবল। পাঁচ-ছয় মাসেও যখন করোনা কমছিল না, তখন বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়। কিন্তু গত বছরে শুরু হওয়া অনলাইন ক্লাস যেন আশার আলোতে পরিণত হয়। দেশের জন্য একেবারে নতুন ব্যবস্থা অনলাইন ক্লাস বড় ধরনের সেশনজটের ধাক্কা থেকে বাঁচিয়েছে বলে মনে করছেন দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার বন্ধ দীর্ঘ হওয়ার পর আমরা সেশনজটের যে ভয় পাচ্ছিলাম, তা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠেছি। অনলাইনে টানা ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে আমাদের ২০২০ ও ২০২১ সালের সব ক্লাস শেষ হয়। এরপর দ্রুত যেন পরীক্ষা শেষ করতে পারি এর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ অর্ডিনেন্স পাস করেছিলাম। সব শিক্ষকের আন্তরিক সহায়তায় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে ২০ সালের পরীক্ষা শেষ করে কয়েকটি বিভাগ বাদে ২১ সালের পরীক্ষাও আমরা শেষ করে ফেলেছি। যে বিভাগ বাকি আছে, তা কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। অনলাইন ক্লাসের সুফলে করোনার মতো বড় ধরনের ধাক্কা আমরা কাটিয়েছি। যেহেতু আমাদের তেমন সেশনজট নেই, তাই সেমিস্টার সময় কমানোর আমাদের প্রয়োজন নেই।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, করোনার সেশনজট কমানোর জন্য আমরা অনেক আগে থেকে পদক্ষেপ নিয়েছি। সবার আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। প্রথমে শিক্ষার্থীরা এটি ভালোভাবে নেয়নি। তবে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এখন তারা সুফল পাচ্ছে। ২০২০ শেষ করে ২০২১ সালের পরীক্ষাও আমাদের শেষের পথে। তবে করোনার জন্য যতটুকু আমরা পিছিয়ে আছি, সামনে সেমিস্টার সময় কমিয়ে ও ক্লাস বাড়িয়ে দ্রুত তা শেষ করার প্লান আছে। যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা দ্রুত চাকরির বাজারে চলে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সরাসরি ক্লাসের মতো না হলেও অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। করোনার সময় সেশনজট ভীতি ছড়াচ্ছিল। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে সে ভীতিটা দূর হয়। উন্নত দেশের চেয়ে আমরা খুব পিছিয়ে নেই, সেটাও আমরা দেখিয়ে দেই। অনলাইনে ক্লাস শেষ করে আমরা ২০২০ সালের পরীক্ষা শেষ করার পথে। তবে এখনো এক বছরের সেশনজটে আমরা পড়েছি। সেশনজট কমানোর জন্য আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে একটি

রিকভারি প্লান তৈরি করেছি। প্রথম বর্ষে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের ক্লাস জানুয়ারি থেকে নেয়া হবে। তারা যেহেতু করোনার জন্য অনেক পিছিয়ে গেছে, তাই তাদের প্রতি সেমিস্টার ৪ মাস করে দুই সেমিস্টার ৮ মাসে শেষ করা হবে। এছাড়া যারা রানিং আছে, তাদের সেশনজট কমানোর জন্য আমাদের রিকভারি প্লান প্রক্রিয়াধীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, করোনার মধ্যে সেশনজট যেন দীর্ঘ না হয়, এজন্য আমরা অনলাইনে কøাস শেষ করি। এখন ২০২০ সালের দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে। কিছু কিছু বিভাগে শেষ হয়ে গেছে। সেশনজট কমানোর জন্য আমরা প্লান করছি। শীতকালীন ছুটি বাতিলসহ অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছি। এছাড়া ক্লাসের সময় বৃদ্ধি করে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সামনের পরীক্ষা শেষ করা যায়, সে বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করব।
বাকি সেশনজট কমাতে উদ্যোগ : এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বাকি সেশনজট নিরসনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় শীতকালীন, শরৎকালীন ও শিক্ষা ছুটি বাতিল করেছে। ক্লাসের সংখ্যা ও সময় বাড়িয়ে ছয় মাসের সেমিস্টার কমিয়ে আনাসহ ছুটির দিনে অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে সেশনজট কমানোর পরিকল্পনা নিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৬ মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেশনজটে পড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, সেজন্য গত ২২ জুন দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গাইডলাইন পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গাইডলাইনে শিক্ষাবর্ষের সময় কমানো, ক্লাস বিভিন্ন ধরনের ছুটি বাতিলসহ ছয়টি বিষয় যুক্ত করা হয়। এছাড়া বিদ্যমান একাডেমিক ক্যালেন্ডারের সময়কাল উল্লেখযোগ্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা, ক্লাসের ব্যাপ্তি না কমিয়ে ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে অল্প সময়ে পুরো সিলেবাসের পাঠদান সম্পন্ন করা এবং প্রচলিত সময়ের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি পরিহার করতেও বলা হয়।
এ নির্দেশনা মেনে ও শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনের কথা চিন্তা করে গত ৫ অক্টোবর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেমিস্টার সময় ৬ মাস থেকে কমিয়ে ৪ মাসে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া ৫০ মিনিটের কøাস ২০ মিনিট বাড়িয়ে ৭০ মিনিট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে সেশনজট কমাতে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন কমিয়ে শুধু শুক্রবার বাদে ৬ দিন ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে। এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে দেখা যায়। সেশনজট কমাতে এমন নানা উদ্যোগ নিতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোরের কাগজ প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়