নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন : ভোটারদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনতু রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে : নাসিক নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা পুরোপুরি জমে উঠেছে। মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী মূল দুই প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রæতি, নিচ্ছেন দোয়া প্রার্থনা। দুই প্রার্থীর পরস্পরবিরোধী কথাবার্তায় নির্বাচনী ডামাঢোলে লেগেছে নতুন রং। ভোটাররাও বিশ্লেষণ করছেন প্রার্থীদের শক্তি সামর্থ্য নিয়ে। এ ক্ষেত্রে নগরবাসী যে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে পেয়েছেন, তাতে করে ডা. আইভীকেই এগিয়ে রাখছেন নগরবাসী।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল শনিবার নগরীর ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। অপরদিকে বন্দর এলাকার ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ চালান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি নির্বাচিত হলে হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দেবেন, পানির বিল বিল মওকুফ, জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া আরো সহজ করে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। ডা. আইভী বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর এখতিয়ার কোনো সিটি করপোরেশনের নাই, এটা সম্পূর্ণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তাহলে তৈমূর কিভাবে ট্যাক্স কমাবেন? পানির বিল মওকুফের কথা বলেন? নারায়ণগঞ্জে ওয়াসার পানি সরবরাহে পাম্প চালাতে প্রতি মাসে ২০ লাখ খরচ হয়। এই টাকা কি তৈমূর নিজের পকেট থেকে দেবেন?
গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের সানারপাড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় তিনি ওয়ার্ডবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। ওয়ার্ডের বিভিন্ন অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। সানারপাড় থেকে শুরু করে দক্ষিণ সানারপাড়, নিমাই কাশারী, মৌচাক রোড, বাঘমারা, বটতলা, ক্যানেলপাড়া এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালান। তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে লিফলেট বিতরণ করেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণসংযোগে যোগ দেন স্থানীয় এলাকাবাসীও। আইভীকে আবার ভোট দিয়ে জয়ী করার আশ্বাস দেন সাধারণ ভোটাররা।
দুপুর দেড়টার পর ২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, আমি নিঃস্বার্থভাবে জনগণের জন্য কাজ করেছি। কখনো কাজের সময় দলবাজি করি নাই। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করেছি। জনগণও আমাকে সেই মূল্যায়ন করবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ একটি নান্দনিক শহর। যারা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিকৃত করার চেষ্টা করেছে সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ রুখে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নারায়ণগঞ্জ আজ বাংলাদেশের রোল মডেল। এখানে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি। গত দুইবার দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে তাকে বিজয়ী করা হয়েছে। তিনি এই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন দুর্নীতিমুক্ত, স্বজনপ্রীতিমুক্ত করেছেন এবং নারায়ণগঞ্জকে একটি নান্দনিক শহরে পরিণত করেছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও নান্দনিকতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে নৌকার কোনো বিকল্প নাই, আইভীর কোনো বিকল্প নাই। অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, আমাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওভোগের ইসকন মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দুবারের নির্বাচিত নাসিক মেয়র ও এবারও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী উপস্থিত ছিলেন।
সুজিত রায় বলেন, ইসকন মানবতা ও শান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর সব ধর্মের শান্তি, মানবতা, ন্যায়, সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে। তাই আমরা যে যে অবস্থায় আছি শান্তির জন্য, মানবতার জন্য একসঙ্গে কাজ করব। এই নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর শামসুজ্জোহা ও আলী আহাম্মদ চুনকা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে আগামী ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আইভীকে জয়যুক্ত করবেন। নৌকা কোনোদিন হারতে পারে না, নৌকার বিজয় হবেই।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় জনগণ চরম ক্ষুব্ধ। আমি নির্বাচিত হলে জনগণের দুর্ভোগ দূর করব। আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেও সেভাবে দায়িত্ব পালন করব।
গতকাল শনিবার দুপুরে বন্দরের ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেমে একথা বলেন তৈমূর। তিনি বলেন, আমি যে অভিযোগ করি তার সাক্ষী নারায়ণগঞ্জের নগরবাসী। ট্যাক্স বেড়েছে কিনা তা নগরবাসী বলবে। পানির জন্য আলাদা করে দেড় লাখ টাকা নেয় কিনা, ট্রেড লাইসেন্স বৃদ্ধি করেছে কিনা এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা এটা জনগণ যারা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করবেন তারা বলবে। আমি সত্যি বলছি না মিথ্যা বলছি নগরবাসী ভালো জানে। তিনি আরো বলেন, জনগনের জয় হবে। সরকারের ব্যর্থতার জবাব জনগণ দিবে। কালকে নির্বাচন কমিশনার আসবে। তাকে পরিষ্কার ভাষায় বলব, তারা যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করেন এবং এ জন্য যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তাহলে সে জন্য তারাই দায়ী থাকবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়