নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

ঢিলেমি-অদক্ষতায় অনেক জায়গায় পৌঁছেনি সব বই : ১১ বছরের রেওয়াজে হোঁচট > প্রধানত দুই কারণে বিলম্ব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য : বছরের প্রথমদিনই বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণে গত ১১ বছরের রেওয়াজে এবার হোঁচট খেয়েছে। এর ফলে দেশের কোথাও শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন সব বই। আবার কোথাও দুটি বা তিনটি বই। আবার বহু জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি বইও পাননি। পাওয়া না পাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার থেকে দেশজুড়ে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শিক্ষা প্রশাসনের ঢিলেমি, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করতেই বছরের বেশির ভাগ সময় চলে গেছে। নির্ধারিত সময়ে বই ছাপানো শুরু না হওয়ায় বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থী বই হাতে পায়নি। সব বই ছাপা না হওয়ায় করোনার দোহাই দিয়ে বই উৎসবও বাতিল করে। অথচ গত বছর বই উৎসব না হলেও বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীরা বই হাতে পেয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যারা বই পেয়েছে তাদের চোখেমুখে ছিল অন্যরকম উচ্ছ¡াস। নতুন বইগুলো বুকে জড়িয়ে রেখেছেন কেউ, আবার কেউ বারবার মলাট উল্টে দেখছেন। চট্টগ্রামে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঋত্বিকা বিশ্বাস বলেন, নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ভালো করে পড়ব, ভালো রেজাল্ট করব। আবার উল্টোদিকে হবিগঞ্জের ৬টি উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির একটি বইও পায়নি শিক্ষার্থীরা। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে তিনটি করে বই। বই না পেয়ে জেলার শিক্ষার্থীরা হতাশ।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম জেলায় এবার প্রায় দেড় কোটি বই পাবে শিক্ষার্থীরা। গত ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে অর্ধেক বই। ধাপে ধাপে দেয়ার কারণে সব বই একসঙ্গে আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি বই চলে আসবে। বইগুলো পৌঁছার পর বিতরণ শুরু হবে।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই না আসায় বিতরণ করা যায়নি। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই দেয়া হয়েছে আংশিক। কিছু জায়গায় দেয়া হয়েছে গত বছরের অতিরিক্ত মজুদ থেকে। কেন এমনটি হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বই আসতে হয়তো আরো কয়েক দিন লাগবে। কিন্তু গতকাল থেকে বই দেয়াও শুরু হয়েছে। শিশুরা বই না পেয়ে যাতে হতাশ না হয় সেজন্য অতিরিক্ত মজুত থেকে বিতরণ করে সমন্বয় করা হয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ম. শাহ আলম বলেন, জেলার বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলায় তিনটি করে বই বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলো আসার পর দেয়া হবে।
এর আগে শিক্ষা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল করোনার কারণে গতবারের মতো এবারো উৎসব করে বই দেয়া হবে না। এ বছর ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বছরের প্রথমদিন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়।
সারাদেশে এ বছর ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ও ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রণীত পাঠ্যপুস্তক রয়েছে এবং এ বিতরণ কার্যক্রম ১২ দিনের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১ থেকে ৩ জানুয়ারি, সপ্তম শ্রেণিতে ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি, অষ্টম শ্রেণিতে ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং নবম শ্রেণিতে ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। অর্থাৎ আগামী ১২ দিনের এ কার্যক্রম শেষ হবে।
তবে শিক্ষা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রাথমিকে ৯ কোটি ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৩২ এবং মাধ্যমিকে ২১ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ৫৫৫টি সরবরাহ করা হয়েছে। এই হিসাবে প্রাথমিকে ৭০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪২ এবং মাধ্যমিকে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০১টি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কিছু বই সরবরাহ বাকি আছে। তবে আমরা আগামীকালের (আজ) মধ্যে সব বই সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আইন অনুযায়ী, মুদ্রণকারীরা মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত সরবরাহে সময় পান। কিন্তু সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে তারা এবার বেশ সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতায় বাকি কাজটুকুও লক্ষ্যমতো শেষ হবে বলে আশা করছি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ের ৩১ কোটি বইয়ের মধ্যে অন্তত ১ কোটি বই এখনো ট্রাকে পথে আছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বই বিতরণ করা হচ্ছে। আর বই ছাপায় বেহাল দশার কারণেই করোনার দোহাই দিয়ে এবার ১২ দিন ধরে বই বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত বই মুদ্রণ শেষ করতে এবার গোটা জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সব বই একসঙ্গে পেতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লাগতে পারে।

এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইদুর রহমান বলেন, জানুয়ারিতে বিদ্যালয় খোলা থাকবে। পাঠদান শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর ২০ দিন আগেই মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছে যাবে।
বই ছাপাতে দেরির কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এবার মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণে দুভাগে দরপত্র দেয়া হয়। প্রথম ভাগে অষ্টম-নবম আর ইবতেদায়ির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানো চুক্তি শেষ হয় গত ৮ নভেম্বর। এই দরপত্রে মুদ্রাকরদের ৮৪ দিন সময় দেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এতে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ শতাংশ বই সরবরাহের শর্ত দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি এবং ইবতেদায়ির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই সরবরাহে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন মুদ্রাকররা। এই দরপত্রে বই সরবরাহে সময় দেয়া হয় ৭০ দিন। সেই হিসাবে ১৭ ডিসেম্বরের অর্ধেক বই সরবরাহের শর্ত দেয়া হয়। জানা গেছে, দ্বিতীয় দরপত্রের প্রায় ৮০ শতাংশ বই মুদ্রাকররা সরবরাহ করেছেন। আর প্রথম দরপত্রের বই সরবরাহ হয়েছে ৬৫ শতাংশের মতো।
একটি সূত্র জানায়, ছাপাখানার মালিকদের একটি অংশ ইচ্ছা করে বই ছাপাতে দেরি করেন। এর কারণ হচ্ছে, যখন ১ জানুয়ারি চলে আসে, তখন এনসিটিবি বইয়ের মানের চেয়ে সরবরাহের দিকে বেশি তাকান। ফলে নি¤œমানের কাগজে বই সরবরাহের পথ সুগম হয়। সাড়ে ৩ কোটি বই সরবরাহে বিলম্বে এটাও একটি কারণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়