পরিকল্পনামন্ত্রী : দেশে রাজনীতিবিদের চেয়ে আমলাতন্ত্রের দাপট বেশি

আগের সংবাদ

শ্যামল দত্ত’র প্রত্যয় : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে ভোরের কাগজ

পরের সংবাদ

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন কাদের মির্জা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : ২০২১ সালে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত উক্তি ছিল, ‘দজ্জা টোয়াই হাইতো নো দজ্জা’। এই উক্তি করে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই।
২০২০ সালের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি নোয়াখালী আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের দলের এমপিরা ‘দজ্জা টোয়াই হাইতো নো’।
তার এ উক্তি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পরে একের পর এক সমালোচনা করতে থাকেন কাদের মির্জা, যা থেকে বাদ পড়েননি বড়ভাই ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেছা কাদের, নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ দেশের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার নেতারা।
পরে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাতের অধিকার নিশ্চিত করলেও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেননি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ফল, আমলারা গাছসহ তাকে দিয়ে দিয়েছে।
দুর্নীতির এক নম্বর পুলিশ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মন্ত্রিত্ব বাদ দিয়ে মসজিদের ইমামতি করারও পরামর্শ দেন মির্জা কাদের। এছাড়া সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে তার নিজের এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণারও হুমকি দেন।
তার এ সমালোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে এক প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন। ওই সমাবেশে কাদের মির্জা ও বাদল অনুসারীদের সংঘর্ষ- গোলাগুলিতে অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির
৫ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিজের দেয়া মালামাল কাদের মির্জা নিয়ে যান। ৮ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান বসুরহাট রূপালি চত্বরে আরেকটি অফিস খুলতে চাইলে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ৯ মার্চ বসুরহাটে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় ফের হামলাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ওই দিন রাত ৯টায় বসুরহাট পৌরসভায় হামলা করেন মেয়র কাদের মির্জার বিরোধী বাদল অনুসারীরা। এতে ব্যাপক গুলিবর্ষণের অভিযোগ করেন তিনি। ওই রাতে চরফকিরা ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের নেতা আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পৌরসভায় অবস্থান করা শতাধিক নেতাকর্মীও গুলিবিদ্ধসহ আহত হন। পরে নোয়াখালী থেকে মিজানুর রহমান বাদলকে গ্রেপ্তার করলে কাদের মির্জাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন বলে গুঞ্জন ছড়ায়। কিন্তু পরে তিনি আর গ্রেপ্তার হননি।
এদিকে বছরজুড়ে কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জা ও বাদল গ্রুপের সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই ছিল। দুপক্ষের মামলা হয় অর্ধশতাধিক।
এসব ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে দল থেকে পদত্যাগ করেন মেয়র কাদের মির্জা। আবার ৪৫ দিন পর নিজে থেকে ঘোষণা দিয়ে দলে ফিরে আসেন। বছরজুড়ে ফেসবুক লাইভে সরব ছিলেন কাদের মির্জা। এর মধ্যে আপন বড়ভাই সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেছা কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খাঁন কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম, সুজিত রায় নন্দি, আহমেদ উল্যাহ, স্বপন মাহমুদ, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী, নিজাম হাজারী, একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ওসি ও পরিদর্শকসহ (তদন্ত) অসংখ্য ব্যক্তির সমালোচনা করেন।
এসব ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের বিবাদে অন্তত চারবার কোম্পানীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। বছরজুড়েই থানায় অতিরিক্ত রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন ছিল। থানায় অন্তত চারজন ওসি পরিবর্তন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিবর্তন হয়েছেন দুজন করে।
এছাড়া ভেঙে দেয়া হয়েছে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পুরনো কমিটি। পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কাদের মির্জা কর্তৃক অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে।
সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে আহ্বায়ক করে সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
তার প্রতিবাদমুখর বক্তব্যের কারণে জেলায় চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের পথে রয়েছে। ফিরে আসছে রাজনৈতিক শিষ্টাচার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়