সংসদীয় কমিটি ; এক এনআইডিতে পাঁচের বেশি সিম নয়

আগের সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোলাহাটের জনপথ

পরের সংবাদ

শুরুতেই হোঁচট খেল ইংলিশরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের গ্যাবায় অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই গতকাল হোঁচট খেয়েছে ইংল্যান্ড। অজি ফাস্টবোলার প্যাট কামিন্স একাই ৫ উইকেট শিকার করে ধসিয়ে দিয়েছে ইংলিশ শিবির। ব্রিসবেনে প্রথম দিন শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে জো রুটদের সংগ্রহ ১৪৭ রান। এদিকে ৬৫ বছর পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া কোনো ফাস্ট বোলার কামিন্স ১২৬ বছরের পুরনো রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন।
এর আগে ব্রিসবেনে গতকাল অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। তবে অজিদের বোলিংয়ের ছন্দটা বলছিল, টসে জিতলে তারা ফিল্ডিংয়েরই সিদ্ধান্ত নিত। ইনিংসের শুরুর বলেই অজি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্কের শিকার ইংলিশ ওপেনার ররি বার্নস। সে বাজে শুরুর ধাক্কাটা সফরকারীরা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দলের খাতায় ১১ রান যোগ হতেই সাজঘরের পথ ধরেন ডেবিড মালান। দলকে বিপন্মুক্ত করার বদলে অধিনায়ক জো রুট রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন। মানসিক অবসাদ কাটিয়ে মাঠে ফেরা বেন স্টোকসও গতকাল নিজেকে মেলে ধরতে পারল না। মাঝখানে হাসিব হামিদ আর ওলি পোপের মধ্যে ৩১ রানের একটি জুটি দাঁড়িয়েছিল। এরপর জস বাটলারের সঙ্গে পোপের ৫২ রানের জুটি ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয় স্টার্কের শিকার হয়ে বাটলার মাঠ ছাড়লে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের এরপর আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কামিন্স অবশ্য দৃশ্যপটে এসেছেন একটু পরে। বেন স্টোকসকে ফিরিয়ে তিনি পেয়ে যান অধিনায়ক হিসেবে প্রথম উইকেটটি। এরপর একে একে তিনি ফিরিয়েছেন হাসিব হামিদ, ক্রিস ওকস, ওলি রবিনসন ও মার্ক উডের উইকেট। আর তাতেই ১৪৭ রানে গুঁড়িয়ে যায় ইংলিশদের ইনিংস। প্যাট কামিন্স ৩৮ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার করেন। ৩৫ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেন মিচেল স্টার্ক। ৪২ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন জশ হ্যাজেলউড। বাকি ১ উইকেট শিকার করেন স্পিনার কেমরন গ্রিন।
বাজে ব্যাটিংয়ের আগেই ইংল্যান্ড এমন পেস বোলিং পিচে সবাইকে চমকে দেয় স্টুয়ার্ট ব্রডকে বসিয়ে রেখে। এর আগেই জানানো হয়েছিল হালকা চোট থাকায় জেমস অ্যান্ডারসনকে মাঠে নামানোর ঝুঁকি নিতে চায় না ইংলিশরা।
২০১৬ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ড ব্রড ও অ্যান্ডারসনকে ছাড়া টেস্ট খেলতে নেমেছে। এর আগে সবশেষ যে টেস্টে ব্রড ও অ্যান্ডারসন খেলেননি, সেটিতে ইংল্যান্ড হেরেছিল। আর সে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। এই দুই ফাস্ট বোলারের সম্মিলিত টেস্ট উইকেট সংখ্যা ১১৫৬। ব্রড ও অ্যান্ডারসন না থাকায় ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ সাজানো হয়েছে মার্ক উড ও ওলি রবিনসনকে দিয়ে। স্পিন আক্রমণ সামলাচ্ছেন জ্যাক লিচ।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়কত্বটা অনেকটা হঠাৎ করেই পেয়েছেন প্যাট কামিন্স। সেটিও আবার অ্যাশেজের মতো উপলক্ষে।
একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ৬৫ বছর পর অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পাওয়ার উপলক্ষটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন কামিন্স। ব্রিসবেনের গ্যাবায় অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে গতকাল কামিন্স ৫ উইকেট পেয়েছেন। আর তাতেই গড়েছেন রেকর্ড। ১২৬ বছর পর অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলের কোনো ‘ফাস্ট বোলার’ অধিনায়ক হিসেবে গড়লেন ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি। টিম লেন্ডলের আগেও ফাস্ট বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন কয়েকজন। কামিন্সের কল্যাণে ১২৬ বছর আগে অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলের আরেক ফাস্ট বোলার অধিনায়ক সামনে এলেন জর্জ গ্রিফিন। তিনিই যে পেস বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়ে সবশেষ ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন। গ্রিফিন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ। ১৮৮২ সালে তিনি যখন প্রথম অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন, সে সময়ই অ্যাশেজ সিরিজের জন্ম হয়েছিল। সে সিরিজেই ‘দুর্বল’ অস্ট্রেলিয়ার কাছে একটি টেস্টে ৭ রানে হেরে যাওয়ার পর ইংলিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্টিং টাইমস ‘ইংলিশ ক্রিকেটের মৃত্যু’ ঘোষণা করেছিল। তারাই ‘মৃত ইংলিশ ক্রিকেটে’র মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে তা অস্ট্রেলিয়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা লিখেছিল। ‘অ্যাশেজ’ শব্দের উৎপত্তিও সেখান থেকেই। কামিন্সের কীর্তির মাহাত্ম্য এখানেই শেষ নয়, ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেট তুলে নেয়ার অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন তিনি। জর্জ গ্রিফিন ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হিসেবে ১২৬ বছর আগে সবশেষ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সেটি টেস্টের প্রথম দিনেই নয়। ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেট নেয়ার শেষ কীর্তিটি ৩৯ বছর আগের। সেটি পাকিস্তানের ইমরান খানের। তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টনে সেই রেকর্ড করেছিলেন। ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেট নেওয়ার প্রথম ঘটনাটি অবশ্য আরো অনেক পুরনো, ১৮৮৯ সালে। ইংল্যান্ডের সিএ স্মিথ পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেট পেয়েছিলেন। এর পরের ঘটনাটি ১৯৩৬ সালের। ইংল্যান্ডের জিওবি অ্যালেন ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট। অধিনায়ক হিসেবে অ্যাশেজেও রেকর্ড হয়েছে কামিন্সের। ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম কোনো অস্ট্রেলীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পেলেন ৫ উইকেট। সবশেষ এই কীর্তি কিংবদন্তি রিচি বেনোর। ব্রিসবেনে প্রথম দিন সবই পেয়ে গেলেন কামিন্স। এখন অপেক্ষা কেবল চূড়ান্ত সাফল্যের। অস্ট্রেলীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ইতিহাসে অমর হতে সেটিই যে বেশি প্রয়োজন কামিন্সের।
এদিকে প্রায় ৬৫ বছর পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব দায়িত্ব পেয়েছে কোনো ফাস্ট বোলার। টিম পেইনের বিতর্কিত ‘সেক্স-টেপ’ আলোচনা না বেরোলে হয়তো এবারের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কামিন্স খেলতেন শুধু বোলার হিসেবে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাসটা জেনে থাকলে কামিন্সের তো আরো অধিনায়কত্ব নিয়ে ভাবার কথা নয়। কোনো ফাস্ট বোলারের সবশেষ অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেয়ার ঘটনা ৬৫ বছরের পুরনো। টিম পেইন সরে দাঁড়ানোয় কামিন্স ছাড়া ভালো আর কাউকেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া খুঁজে পায়নি টেস্ট দলের অধিনায়ক করার ব্যাপারে। ১৯৫৬ সালে ভারতের বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টে ফাস্ট বোলার হিসেবে শেষ অধিনায়কত্ব করেছিলেন টিম লেন্ডল। এরপর ৬৫ বছর কেটে যাওয়ার পর কামিন্সকে খুঁজে নিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়