সংসদীয় কমিটি ; এক এনআইডিতে পাঁচের বেশি সিম নয়

আগের সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোলাহাটের জনপথ

পরের সংবাদ

বন্যহাতির তাণ্ডব চলছেই : শেরপুর সীমান্তে মানুষ-হাতি দ্ব›দ্ব নিরসনে নেই উদ্যোগ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের সীমান্তের তিনটি উপজেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বন্যহাতির তাণ্ডব চলছেই। বন্ধ হচ্ছে না মানুষ-হাতির দ্ব›দ্ব। গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে প্রায় ৪০টি গ্রাম রয়েছে। ওই সব গ্রামের চারপাশ ঘিরে রয়েছে গারো পহাড়। বর্তমানে এসব পাহাড়ি গ্রামে প্রায় প্রতি রাতেই চলছে বন্যহাতির তাণ্ডব।
গ্রামবাসীরা জানান, ১৯৯৫ সালে শেরপুর সীমান্তের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শুরু হয় বন্যহাতির তাণ্ডব। বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক বন্যহাতির একটি দল কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বিচরণ করছে। হাতির দল দিনে গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিচ্ছে। আর সন্ধ্যা হলেই নেমে আসছে লোকালয়ে। খাদ্যের সন্ধানে হামলা চালাচ্ছে বাড়িঘরে। খেয়ে সাবাড় করে চলেছে ক্ষেতের ফসল, শাকসবজি ও কলার বাগান-গোলার ধান। বাধা দিতে গেলে শুরু হচ্ছে মানুষ-হাতির দ্ব›দ্ব। কৃষকদের কষ্টার্জিত ক্ষেতের ফসল ও জানমাল রক্ষার্থে ঢাকঢোল ও পটকা ফুটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যতই হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চলছে ততই বন্যহাতির দল তেড়ে আসছে লোকালয়ে। গত দুই যুগে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে কতজন মানুয়ের মৃত্যু হয়েছে এর পরিসংখ্যান নেই বন বিভাগও প্রশাসনের কাছে।
শেরপুরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও শিশুসহ হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে ২৪ জনের মুত্যু হয়েছে। আর হাতি মারা গেছে ২৩টি। তবে বেসরকারি হিসেবে মানুষ মারা গেছেন ৭০ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। বর্তমানে প্রায় প্রতি রাতেই পাহাড়ি কোনো না কোনো গ্রামে চলছে বন্যহাতির তাণ্ডব। উপর্যুপরি বন্যহাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। দিন পার করছেন হাতি আতঙ্কে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেন, আমাদের তুলনায় ভারতে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বন ভূমি। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকায় হাতির দল ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। হাতিগুলো বাংলাদেশে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সরজমিন গেলে কথা হয় রাংটিয়া গ্রামের জোতি কোচ, হালচাটি গ্রামের সুরেন্দ্র চন্দ্র কোচ, গজনী গ্রামের মনেন্দ্র চন্দ্র কোচের সঙ্গে। তারা জানান, আমরা পাহাড়ে বসবাস করি। এখানকার প্রায় সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বন্যহাতি প্রায় প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে। ক্ষেতের সবজি আর ধান খেয়ে সাবাড় করছে। মাঝেমধ্যে বাড়িঘরেও হামলা করছে।
তারা বলেন, পেটের খাবার না থাকলেও মশাল জ¦ালিয়ে হাতি তাড়ানোর জন্য ৫ লিটার কেরোসিন তেল বাড়িতে রাখতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। অনেকের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তারা আরো বলেন বন্যহাতির তাণ্ডব শুরু হলে প্রথমদিকে সরকারিভাবে হাতি তাড়ানোর জন্য বিনামূল্যে কেরোসিন বিতরণ করা হযেছে। এখন আর বিতরণ করা হয় না।
ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশী বলেন, হাতির তাণ্ডব থেকে সীমান্তবাসীর জানমাল রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে প্রথম থেকেই। কিন্তু স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০১৪ সালে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে কাজ বাস্তবায়ন করায় নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই সোলার প্যানেলটি গ্রামবাসীদের কোনোই কাজে আসছে না।
শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ২০১৪ সালে বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাতির খাবারের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা ও শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ীতে দুটি অভয়াশ্রম তৈরি দেখানো হয়। কিন্তু এ অভয়আশ্রম আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, তিনি নতুন এসেছেন বিধায় তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে মানুষ-হাতি দ্ব›দ্ব নিরসনে স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি দল মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ৮ কিলোমিটার সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ বলেন, মানুষ-হাতি দ্ব›দ্ব নিরসনে তিন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মিটিং করে পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়