সংসদীয় কমিটি ; এক এনআইডিতে পাঁচের বেশি সিম নয়

আগের সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোলাহাটের জনপথ

পরের সংবাদ

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর জনবিস্ফোরণোম্মুখ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও আয়তনের দিক থেকে ৯০তম রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম স্থানে থাকা এ দেশের বর্তমান জনসংখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ কোটি দাবি করা হলেও মূলত এর চেয়ে অধিক জনসংখ্যা হবে বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষকদের আলোচনায় ওঠে আসে। কারণ জনসংখ্যা কম দেখানো অতীতের সরকারগুলোর মজ্জাগত অভ্যাস ছিল, যা থেকে বর্তমান সরকারও বেরিয়ে আসতে পারেনি। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারীর লোক গণনায় জনসংখ্যা দেখানো হয় ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার (প্রায়)। কিন্তু এরপর বিভিন্ন মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে বিআইডিএস জনসংখ্যা পুনর্গণনা করে প্রমাণ করে দেয়, জনসংখ্যা কম দেখানোর ঘটনা সত্যি ছিল। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে দেখা যেত, আদমশুমারী চলাকালে গণনাকারী (বিশেষ করে এ কাজে সরকার স্কুল শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতেন) ডোর টু ডোর গিয়ে কার বাড়িতে লোকসংখ্যা কতজন, পুরুষ কতজন ও মহিলা কতজন জেনে নিয়ে তথ্য কালেকশন করতেন। যা বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ সালে আদমশুমারীর সময় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। এটাও বিআইডিএসের জরিপে ওঠে আসে যে, গণনাকারী ডোর টু ডোর গিয়ে জনসংখ্যার সঠিক তথ্য কালেকশন করেননি। এক কথায় বর্তমান সরকারের আমলে জনসংখ্যা সমস্যাটাকে কোনো সমস্যা বলে মনে করা হচ্ছে না। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে ‘জনসংখ্যাকে দেশের এক নম্বর সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে পরীক্ষার সময় বড় বড় রচনা লিখতে দেয়া হতো শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকে এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠত। বর্তমান সরকারের আমলে এমন কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বর্তমান সরকার কেন এমন গুরুতর সমস্যাকে অবহেলা করছে, তা বোধগম্য নয়।
পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়/একটি হলে ভালো হয়’ এমন সেøাগান নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মা-বোনদের বোঝাতেন, বেশি সন্তান হলে কী কী অসুবিধা হয়, একটি বা দুটি সন্তানে কী কী সুবিধা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শমূলক ও উপদেশমূলক পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো হতো দেয়ালে দেয়ালে এবং প্রিন্টিং মিডিয়া ও বিটিভিতে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। যা বর্তমানে একেবারে নেই বললেই চলে।
বলা যায়, ২০০৯ সালের পর থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০০০-২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে আমি নিজেও এনজিওর উচ্চপদে কাজ করেছি। সে সময় আমরা সাপ্তাহিক সভায় সদস্যদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম চালাতাম। ওই সময় দেখেছি, গরিব ও অশিক্ষিত অনেক দম্পতি স্ব-উদ্যোগে এ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতেন এবং তাদের পরিবার ছোট রাখতে আগ্রহী হতেন। বর্তমানে বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত বন্ধুদের কাছে জানতে পারি, সেসব কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আর উৎসাহ দেয়া হচ্ছে না। হয়তো বর্তমান সরকার রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ও রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে অধিক জনসংখ্যাকে আশীর্বাদ বলে মনে করছে। এতে সাময়িক ইতিবাচক হলেও ভবিষ্যতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে জীবনযাপন করছেন। এসব প্রবাসী কোনো কারণে ভবিষ্যতে দেশে ফেরত এলে অবস্থা হবে ভয়াবহ। সরকার এদের জন্য না পারবে চাকরি বা কাজের ব্যবস্থা করতে, না পারবে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে। ইতোমধ্যে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ প্রবাসীদের জন্য রক্ষিত বেশকিছু কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। যেমন বর্তমানে পারিবারিক গাড়ি তাদের পরিবারের মেয়েদের চালানোর অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। এতে অনেক প্রবাসী কর্মহারা হয়েছেন। এভাবে ধীরে ধীরে প্রবাসীদের কাজ কমে আসছে। তাই সময় এসেছে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে ভাবার।
সুতরাং জনসংখ্যা সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে আবারো পূর্বের মতো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে বর্তমান সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে জনবিস্ফোরণ রোধে কালবিলম্ব না করে আবারো সরকারকে জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করে ডোর টু ডোর কর্মী নিয়োগ, বিভিন্ন সচেতনমূলক, পরামর্শমূলক ও উপদেশমূলক ব্যানার, পোস্টার, হ্যান্ডবিল বিলি, প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। নতুবা জনসংখ্যার চাপে একসময় জাতীয় অগ্রগতির ধারা বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

গোপাল নাথ বাবুল : দোহাজারী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়