সংসদীয় কমিটি ; এক এনআইডিতে পাঁচের বেশি সিম নয়

আগের সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোলাহাটের জনপথ

পরের সংবাদ

চাষিরা চান সরকারের প্রণোদনা : সিংগাইরে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) থেকে : ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ব?্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সরিষাসহ অন্যান্য রবিশস্য ও শাকসবজির জমিসহ অনেক ফসলি জমিই পানির নিচে তলিয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য বেড়ে ওঠা উঁচু সরিষা গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আলুসহ অনেক শাকসবজির জমি। কিছু কিছু জমিতে নব্য ফোটা সরিষার ফুলও ঝরে পড়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। তারা এখন কী করবেন, কী নিয়ে বাঁচবেন, সে ভাবনা যেন তাড়া করছে সবাইকে। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে আনুমানিক শতাধিক মৌয়ালের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ব্যাপকহারে বিভিন্ন জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া শাকসবজির আবাদও হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় বেশি।
বহুল প্রচলিত খনার বচন, ‘যদি বর্ষে আগণে-রাজা যায় মাগনে’। অর্থাৎ যদি অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে দুর্ভিক্ষে রাজাকে ভিক্ষা করতে হবে। হঠাৎ অসময়ে সারাদেশের ন?্যায় পুরো সিংগাইরে বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পার হচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই অঝোর ধারায় বর্ষণের মধ্যদিয়ে। ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে অসময়ের এই বৃষ্টিপাত বিশেষ করে কৃষি সেক্টরে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। গত দু-তিন দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। এছাড়া অনেক স্থানে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হয়েছে। এতে ফসলের মাঠে মাঠে কৃষকের পাকা, আধা পাকা আমন ধান এমনকি জমিতে কেটে রাখা ধান এবং বোরো বীজতলা ভূমিস্যাৎ হয়েছে কিংবা পানিতে ভাসছে। ভাসছে ফল-ফসল, সবজিক্ষেত। পানিতে ভিজে-ডুবে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে গাজর, সরিষা, ভুট্টা, তেলবীজ, বাদাম, তিল, তিসি, মসুর, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, আলুসহ শাকসবজি ক্ষেতের। চোখের সামনেই ফসলের সর্বনাশ দেখে কৃষকের বুকে চাপা কান্না ও আর্তনাদ উঠেছে সবখানে।
কৃষি ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে পড়ায় এর সরাসরি আঘাত না এলেও এর প্রভাবে অসময়ের বৃষ্টিপাতে কৃষি ও কৃষকের জন্য উপকারের তুলনায় অনেক ক্ষতি ডেকে এনেছে। উপকার সীমিত। অপকারই বেশি। বৃষ্টির ধারায় শুকনো মাটি ভিজে সতেজ সজীব হয়েছে।
কেটে গেছে রুক্ষ আবহাওয়া। কিন্তু ফসলহানির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ইউনিয়ন ওয়ারী বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির হিসাব তৈরির কাজ শুরু করেছে।
সিংগাইরে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ধান-গমের বীজতলা, রবিশস্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে পচে গেছে বোরো ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ শীতকালীন সবজির গোড়া পচে গেছে। গত রবিবার থেকে সোমবার টানা বৃষ্টির ফলে অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এ জেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলায় মোট ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার হেক্টর জমির সরিষা, ৩১ হেক্টর জমির ধনিয়া, ২৫০ হেক্টর জমির গাজর ও ৮০০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজিসহ ৩১০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল রয়েছে। এতে টাকার অঙ্কে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানাতে পারেনি। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি- এই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে।
সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের শাহাদাত সাধু জানান, আমরা যারা কৃষক, আমাদের সব শেষ। আমাদের বার্ষিক আয়ের একটা বড় অংশ আসে শীতকালীন সবজি থেকে। কয়েক দিন পরেই গাজর, লালশাক, বেগুন, মুলা, পাতা কপি, ফুলকপি ও ওলকপি বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকড় পচে গেছে। রোদ পেলে বেশির ভাগ সবজি ঢলে পড়বে। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গলে আমাদের। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান স্বপন বলেন, উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও বেশ কিছু রবিশস্যের জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মূলত টাকার অঙ্কে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়টি এখনো সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করবেন বলেও তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়