সংসদীয় কমিটি ; এক এনআইডিতে পাঁচের বেশি সিম নয়

আগের সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোলাহাটের জনপথ

পরের সংবাদ

একই ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে বিড়ম্বনায় পাসপোর্ট অধিদপ্তর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আছাদুজ্জামান : রাজাধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে একই ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ছে। সেই আবেদনগুলো পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, তথ্য গোপন করে নতুন তথ্য দিয়ে আবেদন করা এসব ব্যক্তির আগের পাসপোর্ট রয়েছে। নিজের সত্যিকার পরিচয় গোপন করতেই তারা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। পরে পাসপোর্ট পেতে তাগাদা শুরু করেও পাচ্ছেন না নতুন পাসপোর্ট। আবেদনকারীদের এমন কান্ডে বিপাকে পড়ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
প্রতিদিন জমা দেয়া এসব আবেদনের সমস্যার সমাধান খুঁজতে একদিকে যেমন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দিশেহারা, অন্যদিকে আবেদনকারীরা পাসপোর্ট পেতে অফিসে ভিড় জমানোয় বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন, তারা কখনোই পাসপোর্ট পাবেন না। উল্টো এ ধরনের পাসপোর্ট আবেদনের সংখ্যা দীর্ঘ হওয়ায় আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে এবং বিদেশে মিলিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এ ধরনের আবেদন জমা পড়েছে ৩৮৪টি। যতই দিন যাচ্ছে এ ধরনের আবেদনের সংখ্যা আরো বাড়ছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছেন কিংবা দেশের কোনো মামলার আসামি তারা এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন।
এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে বিভিন্ন নামে যে ভিসাগুলো আসে, সেই ভিসার বিপরীতে অন্য লোক পাঠানোর জন্য এমন প্রতারণা করার চেষ্টা করছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। তারাই বিদেশে যেতে ইচ্ছুক প্রার্থীকে এভাবে পাসপোর্ট বানাতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ঢাকার বাসিন্দা জুয়েল আহমেদ। তার বাবার নাম আলহাজ মোহাম্মাদ আলী। মায়ের নাম আলীমুননেছা। আগের পাসপোর্ট নাম্বার-এসি৭৩৮১৭৪৮। এই পাসপোর্টের তথ্য গোপন করে অন্যের ঠিকানা ব্যবহার করে পরে তিনি যে পাসপোর্টটি গ্রহণ করেছেন তার নাম্বার-ই০৬২৭৯৩০। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালের ২০ জুলাই আবারো অন্য আরেকজনের তথ্য ব্যবহার করে সাউথ আফ্রিকা থেকে একটি নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন, যার এনরোলমেন্ট আইডি নাম্বার জেডএএফ১০০০০০০০৬০২৮৬। যখন তার তথ্যাদি যাচাই করে দেখা হয় তিনি তার আসল তথ্য গোপন করে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। যার ফলে একদিকে আবেদনটি ডেমো জাস্টিফিকেশনে চলে যাওয়ায় পাসপোর্ট পেতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তার এ কার্যক্রম পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেনো নেয়া হয়নি, এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি পাসপোর্টের আবেদন করেন চুয়াডাঙ্গার মাসুম ইসলাম। তার বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম, মায়ের নাম লিপি ইসলাম। যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর একই নাম ও পরিচয়ে হুবহু ঠিকানা ব্যবহার করে আরো একটি নতুন পাসপোর্টের আবেদন করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলেও এবার মাসুম ইসলামের ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়। তখন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ধরা পড়ে এই প্রতারণা। এরপর আবেদনকারীর কে সঠিক আর কে ভুল সেটা শনাক্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। পুলিশ তদন্তেও এর কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। শুধু জুয়েল আহমেদ ও মাসুম ইসলাম নয়- এ ধরনের প্রতারণা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে এনালগ যুগে বা হাতে লেখা পাসপোর্টে অনেকে এ ধরনের প্রতারণা করে পার পেয়ে গেলেও, ডিজিটাল কার্যক্রমের কল্যাণে ধরা পড়ে যাচ্ছেন এমন আবেদনকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন ও মাসব্য) সেলিনা বানু ভোরের কাগজকে বলেন, নিয়মের বাইরে কেউ কোনো আবেদন করলে সার্ভারে থাকা তথ্যে ধরা পড়ে যাচ্ছে। ফলে তাকে আর পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। তবে, এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেয়া আইনগত অপরাধ। যদি কেউ এ ধরনের আবেদন করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস ঢাকার পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ধরনের আবেদনকারীরা অহেতুক প্রতিদিনই এসে ভিড় জমাচ্ছেন। তাতে অন্যদের সেবা দিতে আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়