এবার রাজধানীতে গাড়িচাপায় সাইকেল আরোহী নিহত

আগের সংবাদ

প্রতিকারহীন মৃত্যুর মিছিল!

পরের সংবাদ

রাজধানীর সড়কে আবারো ঝরল শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীর প্রাণ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় আবারো এক শিক্ষার্থী ও এক গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান লিমন (২২) ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সম্পাদনা সহকারী এমদাদ হোসেন (৬০)। গত শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর সড়ক ও কলেজগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। নিহত দুজনই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাদের চাপা দেয় লরি-ট্রাক। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর কাউলা পদ্মওয়েল আউট-গোয়িংয়ে একটি লরি পিছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে সে পিচলিয়ে পড়ে গেলে লরির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে তার মাথায় থাকা হেলমেটটিও গুঁড়িয়ে যায়। পরে মাহাদীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহত শিক্ষার্থীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মো. মোজাম্মেল হক জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার দমদমা পশ্চিম গ্রামে। তিনি (বাবা) থাকেন চট্টগ্রামে। মা মোসলেমা বেগমের সঙ্গে উত্তরা ১০নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় থাকতেন ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে মেজ মাহাদী। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ছেলের মরদেহ দেখতে পান।
খালিদ মাহমুদ টুটুল নামে এক সহপাঠী জানান, শেওড়াপাড়ার গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে পড়েন তারা। গতরাতে গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট থেকে তার মা ঢাকায় আসছিল। তখন সে ঝিগাতলায় খালার বাসায় ছিল। মাকে আনার জন্য খালার বাসা থেকে নিজের মোটরসাইকেলে উত্তরাতে যাচ্ছিল সে।
বাবা মোজাম্মেল হক জানান, চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতে গ্রাম থেকে আবার ঢাকায় আসছিলেন মাহাদীর মা। ছেলের মৃত্যুর খবর না দিয়েই মাঝ রাস্তা থেকে বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হবে।
বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান শেখ জানান, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল ওই তরুণ। তখন লরির চাপায় আহত হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবকের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় জানা যায়। লরিটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে।
এদিকে, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে মিরপুর রোডের কলেজগেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে ট্রাকচাপায় এমদাদ হোসেন নামে এক গণমাধ্যমকর্মী নিহত হন। তিনি দৈনিক সংবাদে সম্পাদনা সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও ট্রাকটি শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে একটি মোটরসাইকেলকে দ্রুতগতির একটি ট্রাক চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মোহাম্মদপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সংবাদকর্মীর ছোট ভাই সেলিম জানান, আমার বড় ভাই দৈনিক সংবাদে কাজ করতেন। রাতে অফিস শেষ করে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে আসার পর পেছন থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন নৃশংস দুর্ঘটনায় যেহেতু কাউকে শনাক্ত বা ট্রাক আটক করা যায়নি, তাহলে কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমরা কোনো মামলা করছি না। ময়নাতদন্ত শেষ হলে মরদেহ টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাব।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ট্রাকটি শনাক্তে আমরা এরই মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ময়নাতদন্তের জন্য আমরা মরদেহটি মর্গে পাঠিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম হাসান নামে নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই পান্থপথ মোড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় গণমাধ্যমকর্মী মো. আহসান কবির খান নিহত হন। এরপর গত ২৯ নভেম্বর রামপুরায় দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ যায় শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়