এবার রাজধানীতে গাড়িচাপায় সাইকেল আরোহী নিহত

আগের সংবাদ

প্রতিকারহীন মৃত্যুর মিছিল!

পরের সংবাদ

ট্রেন-বাস-অটো সংঘর্ষ : অন্যের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন দিলেন পুলিশ কনস্টেবল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : প্রতিদিনের মতো গতকাল শনিবার সকালেও দায়িত্ব পালনের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেন (৪৫)। কিন্তু এই বের হওয়াই যে তার জীবনের শেষবারের মতো বের হওয়া; আর কোনো দিনই যে প্রিয় পরিবারের সদস্যদের মুখটি পর্যন্ত দেখতে বাসায় ফিরতে পারবেন না, তা তার জানা ছিল না।
গতকাল সকালে দায়িত্ব পালন করছিলেন নগরের খুলশি ঝাউতলা রেলগেট এলাকায়। এ সময় রেলগেটের একপাশের খোলা থাকা লোহার গেট দিয়ে রেললাইনের উপর উঠে যায় বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো। আর এক প্রান্ত থেকে ঠিক ওই সময়েই দ্রুতগতিতে ছুটে আসতে থাকে একটি ডেমো ট্রেন। নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে দেখেও রেললাইনের উপর উঠে আসা বাস-অটোরিকশার যাত্রীদের বাঁচাতে ছুটে যান নগর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনির হোসেন। কিন্তু দুর্ঘটনা থেকে কাউকেই তিনি রক্ষা করতে পারেন না; ডেমু ট্রেন-বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনির নিজেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেলগেটের একপাশের লোহার গেট খোলা থাকায় রেললাইনে উঠে যায় বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো। এ সময় নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনগামী ডেমু ট্রেনের সঙ্গে গাড়িগুলোর সংঘর্ষ হয়। এসব গাড়িকে থামাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন কনস্টেবল মনির হোসেন।
ঝাউতলা রেলক্রসিং এলাকায় মনির হোসেনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আলী। তিনি বলেন, মনির ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি রেলগেটের পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সেগুলো সরাতে ছুটে যান। যাত্রীদের বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় ঘটে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। দায়িত্ব পালনে তিনি পিছপা হননি।
এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বাহাউদ্দিন আহমেদ (৩০) নামে সিএনজি অটোরিকশার এক যাত্রী। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। দুর্ঘটনার পর হতাহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। জরুরি বিভাগের সামনে বিলাপ করতে দেখা যায় নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেনের স্ত্রী-সন্তানদের।
নিহত মনির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, সরকারি পোশাক পরা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার স্বামী নিহত হয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি তার রক্তাক্ত মরদেহ। আমাদের কী হবে? সন্তানদের নিয়ে কী করব? তাদের দায়িত্ব কে নেবে?
তিনি বলেন, আমি এর বিচার চাই। যাদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
নিহত মনির হোসেনের বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা ও মেঝ মেয়ে বিবি ফাতেমা বলেন, আব্বু আর নেই। আমরা এখন কী করব? আব্বুর মতো কেউ তো আর ভালোবাসবে না। আমাদের দায়িত্ব কে নেবে? বাবা ছাড়া আমরা অসহায়। আমার বাবার কী দোষ ছিল?
মনির হোসেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কেবিএম ফয়েজ হোসেনের ছেলে। পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দন নগর এলাকায়।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেনের জন্ম ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে নিয়োগ পান, আর সিএমপিতে যোগ দেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। এরপর ট্রাফিক উত্তরে যোগ দেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনির হোসেন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪৯টি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে তার কাছের মানুষজন জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়