পাসপোর্ট ডিজির সঙ্গে ব্রাজিল রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

আগের সংবাদ

ই-কমার্স গ্রাহকের টাকার কী হবে

পরের সংবাদ

হে প্রেমময় হেমন্ত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘কখনো ভোরের রোদে শিশিরের রেণু মেখে পায়
সে পুরুষ হেঁটে যায় কুয়াশায় দেহ যায় ঢেকে,’
-প্রতিকৃতি, আল মাহমুদ।

কুয়াশারা নিশ্চল। মেলে ধরেছে ধূসর এক চাদর। শুকোবে বলে। রোদে। কিন্তু রোদের ঘুম যে ভাঙেনি তখনো। পথের ধারের গাছ-গাছালিগুলোও থির হয়ে আছে। শান্ত দিঘির সবুজ জলের মতো। ফুলকপি, বাঁধাকপির গাঢ় সবুজ সংসার। মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলে আছে। শিমের টালে এখন যৌবন। সবুজ শাড়ি পরা শিমলতার খোঁপায় বেগুনি ফুলের সজ্জা। ঠিক যেন সদ্য কৈশোর পেরোনো অঙ্গনা।
নদীর বুক কেটে বেরিয়ে আসা খাল। তার জলের সভা বসেছে কচুরি-ফুলের। হাতির কানের মতো মস্ত পাতায় আকীর্ণ সেগুনবাগান। তার গায়ে জমে আছে হিম। সবাইকে ছাড়িয়ে বাঁশের লকলকে নবজাতক উঁকি দিচ্ছে দিগন্তে। যেখানে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে লাল বিন্দু। শরীরে বানডাকা কুমারীর কপালের টিপের মতো।
আগুনধানের শরীরজুড়ে কাচভাঙা শিশিরের রেণু। ছড়িয়েছে আলপথের ঘাসেও। ফাঁকা জায়গায় ভিত গেড়েছে হিম ঠাণ্ডা। উত্তরের বাতাসে ঠিটঠিরে অগ্রহায়ণ। হেমন্ত-সায়াহ্নের প্রকৃতি হিমেও ছড়ায় প্রেমের উষ্ণতা। পুবের লাল বিন্দুটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই।
তুমি প্রেম বোঝো হে পুরুষ? বুঝো কি প্রকৃতিতে উত্তরাবায়ুর আলিঙ্গন? তুমি কি ভালোবাসতে জানো হেমন্ত-রমনীকে? যার শরীরজুড়ে হীরের ভূষণ?
কোথাও কোথাও কাটাধান কাত হয়ে ঘুমায় সারি সারি। নাড়ায় তখনো কচিসবুজের পালক। ছড়ায় ছড়ায় সোনালি ফসলের থোকা। কৃষাণীর কোমল পরশের অপেক্ষা। কাহিলচা, ঢেঁকিতে ধান ভানার গান শোনার অপেক্ষা। যে ষোড়শী বউ হয়েছে সদ্য, আলতার দাগ মোছেনি যে পায়ে, ঢেঁকিও অপেক্ষার তার পরশের। পাকা আমনের মুক্তোর মতো অন্নে নব্বান্নোৎসব হবে ঘরে ঘরে। অগ্রহায়ণের সকাল সেই আনন্দের খবরই যেন ফেরি করছে।
পুবের কাঁচা হলুদ বিন্দুটা ধীরে ধীরে লাল হয়ে উঠছে। কুয়াশার ক্যানভাসে মনে হচ্ছে একটা ডিমের কসুম। একটা ভোরডাকা পাখি, কী মনে করে উড়ে গেল নাগলিঙ্গম গাছটার ডাল ছেড়ে। লেজঝোলা ফিঙেটা ডানা দুটো ঝাপটে কেটে গেল কুয়াশার নদী।
নিস্তরঙ্গ জলের ধারে নীলচে মাছরাঙাটা একবার ঘাড় দেখায়, একবার ঠোঁট দেখায়। কার বাড়ির দুটো রাজহংস মিছিলের হাতের মতো ওঠের আর নামে। সেøাগানের মতো ফ্যাস ফ্যাস শব্দ তুলে এগিয়ে যাচ্ছে পুকুরের জলে। নরম কাদায় কুমড়ো ফুলের চিহ্ন এঁকে।
অগ্রহায়ণের ভোরের কুয়াশা থির জলে, শিমের মাচায়, ফুলকপি-বাঁধাকপির ক্ষেতে, শালগম আর মুলোর সংসারে বুক পেতে থাকে পুবের আলোর অপেক্ষায়। চিকচিকে আলো, উঁকি দেয় বাঁশ বাগান আর বুড়ো বিরিক্ষির আড়াল থেকে। ঝলমলে হয়ে ওঠে ভোর। চকচকে সোনার আভরণে জড়ায় প্রেমময় হেমন্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়