রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা আনার চ্যালেঞ্জ : সংশোধিত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হতে পারে জানুয়ারি মাসে

পরের সংবাদ

শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : আগামীর ঢাবিকে নেতৃত্বের ভূমিকায় চান রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এ যাত্রাপথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখতে চান তিনি। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধমে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এটি খুশির খবর। কিন্তু এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকে সর্বাত্মকভাবে কাজ শুরু করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ লক্ষ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদের গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির শুভক্ষণে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অভিযাত্রায় বর্তমানে আমরা এগিয়ে চলেছি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সক্ষম দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি, যারা আমাদের এই অভিযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে মাঠে কাজ করবেন। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিকুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এছাড়া তাদের পেছনে দেশ ও জনগণের বিনিয়োগও যথেষ্ট। তাই শিক্ষার্থীদের পবিবার, দেশ ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবদান তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক টানাপড়েন শুরু হয়। এর প্রথম প্রকাশ ঘটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবিতে ১৯৪৮ সাল থেকে সূচিত ঐতিহাসিক এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবন উৎসর্গ করেন। এ আন্দোলনকে উপজীব্য করেই গড়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার

স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকার ১৯৬১ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স’ জারি করে, যা ‘কালাকানুন’ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সৃষ্টির আগের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
তিনি বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি’ স্থাপনও একটি অনন্য উদ্যোগ। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন এবং ৬টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি। এছাড়া অনুষ্ঠাতে ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা পাঠান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূরণ করে ১০১তম বছরে পদার্পণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে করোনা মহামারির কারণে শতবর্ষের অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একসঙ্গে ১ ডিসেম্বর থেকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নানা অনুষ্ঠান ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন চলবে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থাকবে বর্ণিল সাজে সজ্জিত। তাই সারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোর উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে। কার্জন হল, কলা ভবন, ভিসি চত্বর, স্মৃতি চিরন্তন, বিশ্ববিদ্যালয় কাব ভবন, টিএসসি চত্বর, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাস এবং ফুলার রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক লাল, সবুজ, নীল রঙের বাতির আলোয় সাজানো হয়েছে। চোখ ধাঁধানো এ আলোর উৎসব নজর কাড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়