রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা আনার চ্যালেঞ্জ : সংশোধিত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হতে পারে জানুয়ারি মাসে

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রামের নামে : ‘চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ’ যুক্ত করার দাবি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯১ বছর এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার, জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যুববিদ্রোহে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বিপ্লবী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য কুমার সেন (সূর্যসেন) পরিকল্পনায় গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির ছোট একটি দল দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারটি দখল করে নেয়। কয়েকটি সাধারণ রিভলবার ও বন্দুক ব্যবহার করে বিপ্লবীরা ব্রিটিশ পুলিশের সেই অস্ত্রাগারটি ভেঙে মাক্সেট্রি রাইফেল, রিভলবার ও কার্তুজ লুট করে অস্ত্রাগারে আগুন লাগানো হয়। অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের খবর যাতে তাড়াতাড়ি কাউকে জানাতে না পারে সেজন্য পুরো চট্টগ্রামের টেলিযোগাযোগ নষ্ট করা হয়েছিল। বিপ্লবীরা পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার দখল করে নিয়ে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করেছিলেন এবং অন্য বিপ্লবীরা মাস্টারদাকে গার্ড অব অনার জানিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে অন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা আক্রমণ শুরু করায় মাস্টারদাসহ বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং পরে ট্রেনে করে ব্রিটিশরা ২২ এপ্রিল প্রচুর সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করায় মাস্টারদা’র আদেশে লোকনাথ বলের নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রথমে পিছু গেলেও আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন হওয়ায় সূর্যসেন জীবিত বিপ্লবীদের নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে গিয়ে কোয়েপাড়া বিনয় সেনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। যা তৎকালীন সময়ে বাংলার অকুতোভয় যুবক ও কিশোরদের এই প্রতিরোধ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যা বীর বাংলার দামাল সন্তানদের অসীম সাহসের ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষিত হওয়া উচিত।
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ সুসজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দামপাড়া জেলা পুলিশ লাইন আক্রমণ করে, আমাদের অপ্রস্তুত বীর পুলিশ সদস্যরা মরণপণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে ৫১ জন পুলিশ সদস্য দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। অপ্রস্তুত অবস্থায়ও তারা ১ জন মেজরসহ ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে মেরে ফেলেন। চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনের গেটে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ মো. শামসুল হক, এসপি, চট্টগ্রামসহ ৮১ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের নামোল্লেখ আছে। মো. আকরাম হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (আরআই), মো. এম নুরনবী, টিআই, মো. আবতাবুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক, আবদুল খালেক, ওসি, কোতোয়ালি থানার নাম আমাদের চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যা বীর বাঙালির অহংকার প্রজন্মের জন্য স্মৃতি হিসেবে চির জাগ্রত করার দায়িত্ব আমাদের।
কোনো স্থাপনা বা স্মৃতি, নামকরণের ক্ষেত্রে ওই স্থাপনা বা স্মৃতির পরিচিতি সংশ্লিষ্ট, ইঙ্গিতবহ, আলামত সম্পন্ন শব্দ ব্যবহার করলেই, ওই স্থাপনা বা স্মৃতি সংরক্ষণের তাৎপর্য সহজেই অনুমেয়। সবারই জানা ইতিহাস ‘চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার’ এর সঙ্গে দুটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি জড়িত; কিন্তু চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগারটি নামকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ ও মুক্তিযুদ্ধের দুটি শব্দ উল্লেখ থাকলেও বিপ্লবী, বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন, চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ বা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পরিচিতি সহজেই অনুমেয় কোনো শব্দ সংযুক্ত নাম প্রস্তাবনা করা হয়নি।
যেহেতু চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগারটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত, তাই চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন অস্ত্রাগারটি নামকরণের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম’-এর স্থলে ‘বাংলাদেশ পুলিশ, চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, চট্টগ্রাম’ করা হোক।

তপন ভট্টাচার্য্য : অর্থ সম্পাদক, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ
চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়