রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা আনার চ্যালেঞ্জ : সংশোধিত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হতে পারে জানুয়ারি মাসে

পরের সংবাদ

এইডস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২১ , ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব এইডস দিবস প্রথমে পালিত হয় ৩৩ বছর আগে ১৯৯৮ সালে। বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) দ্বারা ঘোষিত আটটি বিশেষ দিনের মধ্যে একটি হলো বিশ্ব এইডস দিবস। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ডঐঙ’র এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির দুজন জনতথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লুু বুন এবং টমাস নেটটার দ্বারা ১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে প্রথম এইডস দিবসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির পরিচালক ড. জোনাথন মানের কাছে প্রস্তাবটি তুলে ধরা হলে তিনিও ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর দিবস পালন করার অনুমোদন দেন। তখন থেকেই ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত এইচআইভি সংক্রমণের বিরুদ্ধে এইডস সম্পর্কে জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়। এইচআইভি সংক্রমণের বিরুদ্ধে, এইডস ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং যারা এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের প্রতি শোক পালন করার জন্য দিনটিকে বেছে নেয়া হয়। সরকারি স্বাস্থ্য অধিকারীরা, বেসরকারি সংস্থাগুলো এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ তথা সবাইকে সচেতন করতে দিবসটি পালন করে থাকে। এইচআইভি দু-ধরনের হয়ে থাকে। এইচআইভি-১ ও এইচআইভি-২। এর মধ্যে এইচআইভি-১ বেশি তীব্র এবং সহজে সংক্রমণ করে। পৃথিবীতে ছড়ানো এইচআইভি-১ এর সঙ্গে সম্পর্ক পাওয়া গেছে শিম্পাঞ্জির একটি প্রজাতির মধ্যে। শিম্পাঞ্জির রক্ত থেকে প্রথম এই ভাইরাস মানবদেহে সঞ্চারিত হয়। ১৯৫৯ সালে কঙ্গোর এক ব্যক্তি প্রথম এই রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯৮৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে এ রোগ দেখা যায়। বর্তমানে দেশে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে চিকিৎসার আওতাধীন এসেছে মাত্র ৮ হাজার ৩৩ জন। দেশে নতুনভাবে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে ৬৫৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ ও ২১ শতাংশ নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে ১২৪ জন রোহিঙ্গার শরীরে এইডসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৪০ জন পুরুষ এবং নারী ৮০ জন। সর্বমোট ৬৫৮ জনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে। এনএএসসি প্রোগ্রামের তথ্য দেখা গেছে, নতুন যাদের শরীরে এইডস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সাধারণ জনগণ। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে আসা ১৫ শতাংশ এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত, যাদের একটি বড় অংশ অভিবাসী কর্মী। অভিবাসীদের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বেশি। ২০১৮ সালের তথ্যমতে, আক্রান্ত নতুন রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশ অভিবাসী কর্মী ও তার পরিবারের সদস্য। দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ বিদেশে কর্মরত। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, অভিবাসীদের কেউ কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। অনেকে আবার জানেই না তারা এইডসে আক্রান্ত। ফলে তদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা গেলে অভিবাসীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। শিরায় মাদকগ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী এবং হিজড়া এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডসের ঝুঁকি বেশি। ইউএনএইডসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের মাঝে এইচআইভি ঝুঁকি ২১ গুণ বেশি। প্রয়োজনের সময় সুরক্ষার অভাব ও সচেতনতার অভাবই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শহরের মাদকসেবীদের মধ্যে এইডসের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতিকে ঘনীভূত মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও জনসচেতনতার কারণে এ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এইডস রোগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- অবাধ ও অবৈধ যৌন মিলন, এই রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলন, বর্তমানে মাদকাসক্তি একটা বড় সমস্যা, নেশার সময়ে একই সুচ সিরিঞ্জ ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত কোনো সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করা, ঐওঠ আক্রান্তদের মাড়ির ক্ষত ও দেহের ক্ষত থেকে নিঃসৃত লালা ও রস থেকে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণগুলো হলো- একটানা ১০ দিন বা তার বেশি জ্বর থাকা, জিহ্বা, ঠোঁট, গলা ও যৌনাঙ্গে ঘা হওয়া, শুষ্ক কাশি থাকা, শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারারাত শরীরে ঘাম অনুভূত হওয়া। সাধারণত এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য। কারণ এর কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে কিছু কিছু ওষুধ আছে যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িক সুস্থতা দিতে পারে। যেমন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। সময়মতো ওষুধ সেবন করা, জল ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে বঞ্চিত না করে কাজে উৎসাহিত করতে হবে, তাহলে সে মনের জোর পাবে। এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যে কোনো যৌনরোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, রক্ত দেয়া ও নেয়ার সময় একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে, গর্ভের প্রথম অবস্থায় মায়ের এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হবে। বাংলাদেশে এইডস নির্মূলে কাজ করে ইউনিসেফ। এই কর্মসূচিতে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বেশি মনোযোগ দেয়া হয়, কারণ এ জায়গাগুলোতেই এইডস আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এইচআইভি কর্মসূচির কারণেই ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে একটি মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এতে ২০ হাজার মানুষের জীবন বেঁচেছে, এক লাখ ৪১ হাজার মানুষকে এইচআইভি সংক্রমণ থেকে বাঁচানো গেছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর সর্বোচ্চ দেড় হাজারের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। ইউনিসেফ এইচআইভি চিকিৎসায় প্রতিরোধমূলক পন্থায় এগোয়, যা ভাইরাস বিস্তৃতি রোধ করে এবং অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। ফলস্বরূপ এইচআইভি শরীরে নিয়েও দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব হয়। সেজন্য ইউনিসেফ রোগীদের বিনামূল্যে নিয়মিত ওষুধ ও যথাযথ সেবা সরবরাহ এবং ফলোআপ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) এইডস বিষয়ক লক্ষ্য অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ হতে এইডস রোগটি নির্মূল করার জন্য জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনসচেতনতা সৃষ্টি। এইডস সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং সবাইকে এ বিষয়ে অবগত করার মাধ্যমে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা এইডস নির্মূল করতে সক্ষম হবো।

চামেলী বৈরাগী : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়