মেডিকেল বোর্ড : লিভার সিরোসিসে খালেদার ব্লিডিং হচ্ছে

আগের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

পরের সংবাদ

সালমান এফ রহমান : আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুই দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে ৫ বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরো কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে। তিনি বলেন, যদিও এবারের সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রতিশ্রæতি পাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাতগুলোকে তুলে ধরাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। গতকাল সোমবার সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর হোটেল রেডিসনে দুদিনের এ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। দুই দিনের এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ জায়গা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশী ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ অত্যন্ত নিরাপদ। এখানকার নীতিসমূহ বিনিয়োগ উপযোগী করা হয়েছে। আপনি এখানে বিনিয়োগজনিত মুনাফা দেশে নিয়ে যেতে পারবেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বড় ধরনের সাড়া পেয়েছি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। তারা ইউরিয়া সার, চিনি ও বেভারেজ শিল্পে এবং বড় আকারের সিমেন্ট কারখানা স্থাপনে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া আইয়াজ ও ইউনাইটেড গ্রুপ যৌথভাবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার, কর্ণফুলী ড্রাই ডক ১১৮ মিলিয়ন ও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল সোমবার বিষয়ভিত্তিক মোট ছয়টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে ৫৪ দেশের ৬ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
পোশাক ও বস্ত্র খাত নিয়ে আয়োজিত কর্ম অধিবেশনে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, নীতি-কৌশলেরও ধারাবাহিকতা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, পোশাক খাতে কাস্টমস ও এনবিআর সংক্রান্ত অনেক জটিলতা রয়েছে এখনো। এগুলো দূর করতে হবে। এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ব্যবসার উন্নতি ঘটাতে যানজট নিরসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্ম অধিবেশনে উপস্থিত বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সরকারের নীতি-কৌশলের ধারাবাহিকতা রক্ষার আশ্বাস দেন।
টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ শিরোনামে দিনের অন্য এক কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশে এখন ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ। করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। আর্থিক খাতও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা।
অধিবেশনে অন্য বক্তারা বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ যেন আর বাড়তে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। এ সময় আর্থিক খাতের সংস্কার, এসএমই খাত ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের বিষয়ে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দেন তারা।
দিনের আরেক অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য অনেক ভৌত অবকাঠামো বানিয়েছেন। এছাড়া তিনি একটি ভালো আইনি কাঠামোও তৈরি করেছেন, যাতে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে ভালো একটি প্রোটেকশন পায়। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বর্তমান সময়ের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি বড় সাফল্য। কোভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশের ওপরে এবং গত এক দশকে তা ৬ শতাংশের বেশি ছিল।
তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নীতির কারণে। বাংলাদেশ এই সফলতা ধরে রাখতে পারলে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ সফলতা ধরে রাখতে সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কোম্পানি আইনও সংশোধন করেছে।
‘পরিবহন ও লজিস্টিকস’ শীর্ষক কারিগরি এক অধিবেশনে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো অপ্রত্যাশিত নীতি কার্যক্রম গ্রহণ করবে না যা আপনাদের বিনিয়োগের বিপক্ষে যেতে পারে। আপনাদের বিনিয়োগ এ দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিকস খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়