মেডিকেল বোর্ড : লিভার সিরোসিসে খালেদার ব্লিডিং হচ্ছে

আগের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

পরের সংবাদ

মিরসরাইয়ের পাহাড়ে বাড়ছে গোলমরিচ চাষ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : পাহাড়বেষ্টিত মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার প্রধান পেশা ছিল কাঠকাটা, বাঁশকাটা। যার ফলে উজাড় হয়ে যেত বনাঞ্চল। পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পুরুষরা চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের দৈনন্দিন জীবনে গত তিন বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে মূল্যবান মসলা গোলমরিচ চাষের ফলে। গত বছর ২০টি প্লট থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে প্রায় ৭০ কেজি গোলমরিচ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এ বছর ফলন বেশি হওয়ায় সাড়ে ৩ হাজার কেজি শুকনো গোলমরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সমাজ উন্নয়ন সংস্থা অপকার সহযোগিতায় ও দাতা সংস্থা পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামে ১১টি প্লট ও ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে ৯টি প্লটে বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ শুরু করা হয়। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অপকার পক্ষ থেকে গোলমরিচের চারা, খুঁটি ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ করা হয় কৃষকদের মাঝে। ২০টি প্লটে এখন গোলমরিচের ফল এসেছে। প্রতিটি গাছে গলার পুঁতি মালার মতো ফল ধরেছে। গত বছরও অনেক কৃষক গোলমরিচ বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি গোলমরিচ ৫০০-৬০০ টাকায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। এ বছর কাঁচা গোলমরিচ প্রায় ১০ হাজার কেজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। শুকানোর ফলে যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কেজিতে রূপান্তরিত হবে। ৬০০ টাকা কেজি ধরে যার মূল্য দাঁড়ায় ২১ লাখ টাকা।
কৃষক রুহুল আমিন বলেন, কয়লা গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত। সমতল জমিতে ধান চাষ ছাড়া পাহাড়ে কোনো ফসল হতো না। আমি গোলমরিচ চাষের প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ২৫ শতক জমিতে চাষ করি। গোলমরিচের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আদা, হলুদ, লালশাক ও মূলার শাকও চাষাবাদ করি। গোলমরিচের চারা রোপণের ২ বছর পর ফল আসে। আষাঢ়- জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুল ধরে, মাঘ মাসে ফল পাকে। আমি গত বছর ৫০০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি শুকনো গোলমরিচ বিক্রি করেছি। এটি ঝাঁজ বেশি হওয়ায় স্থানীয় মসলার দোকানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য ফসলের থেকে এটির রোগবালাই কম।
গোলমরিচ চাষি শ্রীকান্ত ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে গোলমরিচের ফলন বেশি হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণে গাছ মরে যায়। এজন্য এখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে গোলমরিচ চাষ আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এছাড়া গোলমরিচ পাকার পর তা সিদ্ধ করে পুনরায় শুকানোর প্রয়োজন হয়। গোলমরিচ শুকানের জন্য একটি বয়লার মেশিন স্থাপন করা হলে চাষিদের অনেক উপকার হবে। তিনি গত বছর ৬০০ টাকা করে ৫ কেজি শুকনো গোলমরিচ বিক্রি করেছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে গোলমরিচ চাষ ভালো হয়। বিচ্ছিন্নভাবে পঞ্চগড়, শ্রীমঙ্গলে গোলমরিচ চাষ করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে মিরসরাইতে প্রথম গোলমরিচ চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয় এনজিও অপকা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, চারা বিতরণসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বিতরণ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে গোলমরিচের ফলনও ভালো হয়েছে। গোলমরিচ চাষ করে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এসেছে স্থানীয় কৃষকদের। গোলমরিচ চাষকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া এবং কৃষকদের জন্য বয়লার মেশিন স্থাপন ও গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়