মেডিকেল বোর্ড : লিভার সিরোসিসে খালেদার ব্লিডিং হচ্ছে

আগের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

পরের সংবাদ

বিক্ষোভ অব্যাহত : বিআরটিতে আজ শিক্ষার্থীদের অবস্থান ধর্মঘট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে বাস ভাড়া অর্ধেক করাসহ সড়ক নিরাপদ করার ৯ দফা দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। টানা পঞ্চম দিনের মতো গতকাল সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীর নীলক্ষেত ও শান্তিনগর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। ফলে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যানজটে পড়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। আজ মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয় অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ ও র‌্যালি শেষে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া গতকাল সকালে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) কার্যকর করাসহ তিন দফা দাবিতে প্রগতিশীল ৮টি ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি থেকে মিছিল বের করেন। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লব ছাত্র-যুব আন্দোলন। তবে এ সময় পুলিশি বাধায় পড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়িচাপায় নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম নিহতের ঘটনায় বিচার, হাফ ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার ও রাজারবাগ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘নাঈম হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সেøাগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভের কারণে সড়কে যানজট দেখা দেয়। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এর আগেও বিইউপির ছাত্র আবরার নিহতের ঘটনায় আন্দোলন হয়েছিল। নিরাপদ সড়ক গড়তে অনেক প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার প্রতিশ্রæতি নয়, বাস্তবায়ন চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শান্তিনগরে সকাল থেকেই পুলিশের অতিরিক্ত গাড়ি মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাদের সঙ্গে কথা বলে। পরে শিক্ষার্থীরা একটি র?্যালি নিয়ে কাকরাইল হয়ে বেইলি রোড প্রদক্ষিণ করে আবার শান্তিনগরে ফিরে আসে। এ সময় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খান সামিন আজ মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন বলে জানায় পুলিশ। সেখানে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় একজন শিক্ষার্থী হ্যান্ডমাইকে বলেন, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিআরটিএ ভবনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করব। যদি তারা অফিস টাইমের ভেতরে প্রজ্ঞাপন জারি না করে, তবে সেখানে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে দেব।
রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ বলেন, কয়েকটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী নীলক্ষেত মোড়ে এসেছিল। তবে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকলেও এরপর থেকে স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানান নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স. ম. কাইয়ুম।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত বুধবার সড়কে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর হাফ ভাড়ার পাশাপাশি আন্দোলনে নিরাপদ সড়কের দাবি ফের সামনে আসে। পরের দিনই বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। মাঝে শুক্রবার বিরতি দিয়ে শনিবার দুপুরে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি দল। সেখানে ৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তারা রাস্তা ছাড়েন।
এদিকে গত রবিবার প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছেন।
রামপুরায় রাইদা পরিবহনের বাস বন্ধ রাখল ছাত্ররা : নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজের এক ছাত্রীকে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার জেরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা রাইদা পরিবহনের ৪০-৫০টি বাস রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় এক ঘণ্টা আটকে রাখে। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, দুপুরের দিকে ইম্পিরিয়াল কলেজের এক ছাত্রী মুগদা থেকে করোনার টিকা নিয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। বাড্ডা ইউলুপের সামনে নামার সময় তাকে ওই বাসের হেলপার ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর। এ খবর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রামপুরা বিটিভি ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয় ও রাইদা পরিবহনের ৪০-৫০টি বাস আটকে দেয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। তিনি আরো বলেন, যে বাসের হেলপারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে ওই বাসটি আটক করা যায়নি। এছাড়া বাসের নম্বরও জানা যায়নি। তবে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাইদা পরিবহনের মালিক পক্ষকে থানায় ডাকি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও থানায় আনা হয়। বিকালে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও অর্ধেক ভাড়াসহ কয়েকটি দাবি জানান হয়। মালিক কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিলে ঘণ্টাখানেক পার যানবাহন চলা শুরু হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়