মেডিকেল বোর্ড : লিভার সিরোসিসে খালেদার ব্লিডিং হচ্ছে

আগের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

পরের সংবাদ

ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : কালীগঞ্জে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে জেলা ও উপজেলায় অনুমোদনের কারণে এসব জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সেবা প্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সবগুলোতে একই সমস্যা। নতুন একটি জন্ম সনদ পেতে এক সপ্তাহ থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। পৌরসভার জেলা এবং ইউনিয়নের জন্য উপজেলা থেকে অনুমোদন আনতে হয়। আবার জন্মনিবন্ধন পাওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের ভুল রয়েছে। সেই ভুল সংশোধন করতে গেলে আরো সময় লেগে যায়। ফলে ওই এলাকার মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে ১৮-২০ বছরের ভেতর যাদের বয়স। যারা এখনো ন্যাশনাল আইডি কার্ড পাননি, তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য জন্মনিবন্ধনের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
সরজমিন গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো ব্যক্তির মৃত্যু সনদ তৈরি করতে গেলেও জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়। জন্ম সনদ না থাকলে নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এগুলো পেতে দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাসও লেগে যায়। তবে ভোক্তভোগীরা সবাই ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি ও ভোগান্তির দ্রুত সমাধান চান।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার (৫১)। পেশায় তিনি একজন ঝালমুড়ি, ফুসকা ও চটপটি বিক্রেতা। তিনি জানান, তার ছেলেমেয়ে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সন্তানদের জন্মনিন্ধন থাকলেও তা ডিজিটাল নয়। তাই তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভায় স্বাস্থ্য বিভাগে ডিজিটাল জন্মনিন্ধন করতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সন্তানের ডিজিটাল জন্মনিন্ধনের আগে বাবা-মায়েরটা লাগবে। পরে বাবা-মায়ের ডিজিটাল জন্মনিন্ধন নম্বর দিয়ে সন্তানদেরটা করতে হবে। তিনি নিয়মানুযায়ী পৌরসভায় গত ১৭ অক্টোবর তিনি ও তার স্ত্রীর ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের আবেদন করেন। পরে তিনি জানতে পারেন ওই আবেদনের কপি নিয়ে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কাছ থেকে অনুমোদন আনলে পরে পৌরসভা থেকে প্রিন্ট করে দেয়া হবে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটি পড়ে যান বিপদে। তিনি সন্তানদের কথা চিন্তা করে গত ২৫ অক্টোবর যান। যেখানে গিয়ে জমা দেয়ার পর ওখানকার লোকজন জানায় ১ সপ্তাহ পর অনুমোদন পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই অনুমোদন পাওয়া যায় ৭ নভেম্বর। কিন্তু তিনি স্বামী-স্ত্রী আবেদন করলেও অনুমোদন আসে শুধু তার নিজেরটা। পরে এটা জেলার ওই সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা আজ না কাল, কাল না পরশু করে সময় নষ্ট করতে থাকেন। অবশেষে ২৯ নভেম্বর তিনি তার স্ত্রীর আবেদনের অনুমোদন পান। তবে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নিবন্ধনের এই পদ্ধতিকে ভোগান্তি বলে মনে করছেন। তার ভাষায় সাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজ পদ্ধতি চালু করা উচিত। পৌরসভারটা পৌরসভায় থাকা উচিত।
জামলপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম (৬০) জানান, তার মেয়ে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার শিল্পাঞ্চল এলাকার একটি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। কলেজ থেকে মেয়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন চেয়েছে, তা করতে গিয়ে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার ও তার স্ত্রীর নিবন্ধনের আবেদন করে এক মাস ঘুরে তা হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল স্ত্রীর নামের বানানে ভুল। পরে ওটা নিয়ে আরো এক মাস ঘুরে সময় ও অর্থ নষ্ট করে হাতে পাওয়া যায়। তারপর মেয়েরটার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এটাও কমপক্ষে মাসখানেক সময় লাগবে। তবে দেশের প্রচলিত নিয়মের প্রতি তার শ্রদ্ধা থাকলেও ডিজিটাল এই পদ্ধতির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। দ্রুত এই পদ্ধতির উন্নতি ও সমাধান চান তিনি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশরাফুজ্জামান জানান, বিগত দিনে মেয়র, কাউন্সিরদের বেলায় এই ধরনের নিয়ম চালু ছিল না। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতি তিনি স্বাগত জানান। তবে সদ্য নির্বাচিত হয়ে পৌরসভায় সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে নিজেরাও চাপের মুখে আছেন। সাধারণ মানুষ মনে করেছেন ভোট দিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর বানিয়ে তারা এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকারি নিয়মের বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে না পারায় অতৃপ্তিতে ভোগছেন বলেও জানান ওই কাউন্সির। তবে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির দ্রুত সমাধান চান তিনি। তার মত একই কথা বলেন ওই পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কান্তা ভূঁইয়া।
উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন জানান, বর্তমানে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। সারাদেশে একযোগে এই কাজ শুরু হওয়ায় সার্ভার সদস্যায়ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। উপজেলার আওতায় থাকায় সময় ও ঝামেলা বেশি হচ্ছে। তবে নিবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়াটা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকলে জনগণের ভোগান্তি অনেক কম হতো। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌর মেয়র এস এম রবীন হোসেন বলেন, আসলে এটা শুধু কালীগঞ্জ পৌরসভায় নয়। সারাদেশের যেসব পৌরসভায় জিডিটাল জন্মনিবন্ধনের আবেদন হচ্ছে তার অনুমোদনই জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের কাছ থেকে অনুমোদন আনতে হয়। তবে হ্যাঁ, সারাদেশে একযোগে এই কাজ শুরু হওয়ায় সার্ভার সদস্যায়ও সাধারণ মানুষের জন্মবিন্ধনে ভোগান্তি ও সময় বেশি লাগছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, উপজেলায় শুধু ৭টি ইউনিয়নের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন বাই ইউনিয়ন অনুমোদন দেয়া হলেও কারো জরুরি হলে তা করে দেয়া হচ্ছে। যদিও একজন এই কাজটি করছে ভবিষ্যতে এই কাজে অন্য কাউকে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানান উপজেলার ওই নির্বাহী কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করার বিধান থাকলে মানুষ তা করে না। সময় মতো নিবন্ধন না করার কারণেই এ সমস্যা বাড়ছে। সময় মতো নিবন্ধন করা হলে এ সমস্যা অনেক কমে যাবে। জনসচেতনতার মধ্যে এ ভোগান্তি কমানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়