মেডিকেল বোর্ড : লিভার সিরোসিসে খালেদার ব্লিডিং হচ্ছে

আগের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

পরের সংবাদ

আধুনিক ও বাসযোগ্য পৌরসভা গড়াই আমার লক্ষ্য : মো. আব্দুস শুকুর, মেয়র, বিয়ানীবাজার পৌরসভা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল ওয়াদুদ, বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি : নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও আলোকিত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চান বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর। শুরু থেকেই সেই লক্ষ্যে পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে ভোরের কাগজকে এসব কথা জানান আব্দুস শুকুর।
২০০১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নীত হয় বিয়ানীবাজার পৌরসভা। কিন্তু পৌরসভায় উন্নীত হলেও নির্বাচিত মেয়র পেতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল পৌরবাসীকে। উচ্চ আদালতে রিট থাকায় পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পরও এত বছর নির্বাচন হয়নি এ পৌরসভায়। নির্বাচন আদায়ের জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে কিন্তু নির্বাচন হয়নি। অবশেষে নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন মেয়র আব্দুস শুকুর। মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে দিনের পর দিন হাইকোর্টে ছোটাছুটি, চেষ্টা-তদবির করে ছিনিয়ে আনলেন পৌরসভার জনগণের ভোটাধিকার। বিনিময়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হন তিনি। আর পৌরবাসী তাকে ভোট দিয়ে বসায় মেয়রের আসনে।
মেয়র আব্দুস শুকুর ছিলেন নব্বই দশকের ছাত্রলীগ নেতা। সে সময় বিয়ানীবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। একজন পরিশ্রমী ও পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। ছিলেন বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ডের সভাপতি, নাট্য ও সমাজকর্মী। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
ভোরের কাগজকে আব্দুস শুকুর বলেন, ২০০১ সালে ১৮.১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ৯টি ওয়ার্ড, ৯টি মৌজা ও ১১টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় বিয়ানীবাজার পৌরসভা। কিন্তু নামমাত্র সে পৌরসভায় ছিল না কোনো উন্নয়ন বা নাগরিক সেবা। এমনকি দীর্ঘ ১৬ বছর কোনো মেয়র পাননি বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাগরিকরা। বঞ্চিত ছিলেন সব আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে। তারপর ২০১৭ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হই। ১৬ বছরের উন্নয়নবঞ্চিত পৌরসভার প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে পৌরসভার কাউন্সিলর কর্মকতা, কর্মচারী ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করি এবং এক বছরের মধ্যেই পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত করি। বিয়ানীবাজার পৌরসভা এখন প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদকে। কৃতজ্ঞতা জানাই আমার দল আওয়ামী লীগকে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য। একই সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাই পৌরসভার সম্মানিত নাগরিকদের।
নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি কী ছিল, আর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বিয়ানীবাজার পৌরসভা বলেন, আমার কোনো নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল না। আমি পৌরবাসীকে বলেছিলাম আমি নির্বাচিত হলে বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে পরিবর্তন করব, ১৬ বছরের জঞ্জালমুক্ত করে সব ধরনের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভায় পরিণত করব এবং আমি তা করেছি। আমি দায়িত্ব নিয়েই বিয়ানীবাজার পৌর শহরের প্রধান সমস্যা ড্রেনেজ সংস্কার করেছি। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছি। পৌরসভার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে শহরের প্রমথনাথ দাস রোডসহ বিভিন্ন গ্রামে ১৫টি রাস্তা আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন করেছি। আরো বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন আছে। বেশ কিছু রাস্তার পাশে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করেছি। এছাড়া পৌরবাসীর জন্য ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করেছি। এ প্লান্টের আওতায় পর্যায়ক্রমে পৌরসভার সব পরিবার হাউজ কানেকশনের সুবিধা পাবে। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে একটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
মাছ বাজার সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেছি। ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর এলাকায় ২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। এছাড়া শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু প্রকল্পে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডে রাস্তাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করেছি। পৌরসভার অন্তর্গত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস ও ক্যাম্পাস সজ্জিতকরণসহ শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছি। ডাস্টবিন ব্যবস্থার প্রচলন করেছি এবং শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। পৌর শহরকে ব্যানার ও দেয়াল লিখনমুক্ত করেছি। এছাড়া করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমি আমার কাউন্সিলরদের নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রচারণা, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি, লকডাউন শুরু থেকে অসহায় দিনমজুর, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।
বর্তমানে পৌরসভার প্রধান সমস্যা সম্পর্কে আব্দুস শুকুর বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নির্বাচিত হয়েই পৌর শহরের সবগুলো ড্রেন সংস্কার করেছি কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নেই, যে কারণে পৌর শহরের বর্জ্য বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ফেলতে হয়।
যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে তিনি বলেন, যানজট একটি জাতীয় সমস্যা। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে যাবাহন কিন্তু সেই তুলনায় রাস্তাঘাট স¤প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছে। এখন শহরের বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র গড়ে ওঠা বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরাতে পারলে শহরের যানজট সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে। আমরা পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছি। এখন সেখানে বাস-মিনিবাস স্থানান্তর করা ও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যানজট সমস্যা নিরসনের পরিকল্পনা রয়েছে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আপাতত অস্থায়ীভাবে ড্রেন সংস্কার করেছি। তবে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার লক্ষ্যে প্রমথনাথ দাস রোড থেকে লুলাখাল, আরএইচডি ডাকবাংলো থেকে লুলা খাল, খাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সড়কভাংনি খাল, আরএইচডি সুপাতলা পল্লীবিদ্যুৎ থেকে লুলা খাল, টিএন্ডটি রোড থেকে লুলা খাল থেকে পর্যন্ত ৬টি স্থায়ী ড্রেন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি এমন একটি পৌর শহরের, যেখানে থাকবে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। পৌর এলাকা হবে আলোকিত, পরিচ্ছন্ন ও জনসাধারণের বাসযোগ্য। সেই লক্ষ্যে পৌরসভার রাস্তা পরিচ্ছন্ন, যানজটমুক্ত ও স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে চাই। এছাড়া পৌর শহরের প্রধান সড়কের রোড ডিভাইডার এসএস পাইপ দিয়ে সজ্জিত করা, শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আকর্ষণীয় চত্বর নির্মাণ, পৌর শহরসহ সব এলাকাকে আলোকিত করতে রোড লাইট ও ডাস্টবিন স্থাপন, শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য পার্ক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য একটি মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করাসহ আধুনিক ও উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান করে বাসযোগ্য পৌরসভা গড়ার জন্য আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমার।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও খেলাধুলা করি, পাশাপাশি আমি একজন সংস্কৃতিকর্মী। তাই এসব বিষয়ে আমি সব সময়ই আগ্রহী। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে আমি ও আমার পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি। বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনকে অনুদান প্রদান করে ক্রীড়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। বিয়ানীবাজার উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ডসহ সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে আমার পরিষদের সহযোগিতা ছিল ও থাকবে। আগামী বছর করোনামুক্ত হলে বিয়ানীবাজারের সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে আমি একটি সংস্কৃতি উৎসব ও মেয়র নাট্যোৎসব আয়োজন করব।
পৌরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, পৌরবাসী হচ্ছেন এই পৌরসভার মালিক। তারাই আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সব সময় তাদের সহযোগিতা চাই; ভালোবাসা চাই। আমি পৌরসভার প্রত্যেক নাগরিককে মেয়রের ভূমিকায় দেখতে চাই। আমাদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের নাগরিকরা সচেতন হলেই প্রিয় এই পৌর শহরকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে পারব ইনশাআলাহ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়