প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালু করতে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সরকারের কাছে ভর্তুকির দাবি নিয়ে সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতিক থেকে শুরু করে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও বাসে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়টিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, পাকিস্তান আমল থেকে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ায় চলাচলের রেওয়াজ রয়েছে; তখন তো ভর্তুকি দেয়া হতো না। তাহলে এখন কেন দিতে হবে। বাস মালিকদের এই দাবি ‘অনৈতিক’। হাফ পাসের দাবি শিক্ষার্থীদের ‘অধিকার’।
এদিকে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বিআরটিএ এর বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। দুপুরে বনানীর বিআরটিএ কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরিবহন নেতারা এই বৈঠকে হাফ ভাড়া চালু করতে সরকারের কাছে ভর্তুকি দাবি করেন। এ লক্ষ্যে তারা টাস্কফোর্স গঠন করাসহ আরো কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। তাদের দাবির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো হয়নি সিদ্ধান্ত। এ কারণে হাফ ভাড়ার বিষয়টিও ফায়সালা হয়নি। তবে মালিক সমিতির সঙ্গে চলতি সপ্তাহের যে কোনো সময় আবারো বৈঠকে বসবে বিআরটিএ।
ভর্তুকি দাবি প্রসঙ্গে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়টি চিরাচরিতভাবে চলে আসছে। এটা অনেক পুরাতন সিস্টেম। সেভাবেই শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে আসছে। এখন হাফ ভাড়া নেয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বাস মালিকদের ভর্তুকি চাওয়াটা একেবারেই ‘অনৈতিক’ বলে আমি মনে করি। আগে তো বাস মালিকরা ভর্তুকি নেয়নি, তাহলে এখন কেন এই দাবি করা হচ্ছে?
জাতীয় সংসদের সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের সময় হাফ ভাড়ার দাবি ওঠে। এরপর ’৬৯ সালে আইয়ুব খানের সময় থেকে শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়া দিয়ে চলাচল করে আসছে। তাহলে এখন কেন বাস মালিকদের ভর্তুকি দিতে হবে? এটা মোটেই ‘যৌক্তিক’ নয়। ভর্তুকি দেয়াই সমস্যার সমাধান নয়। বাসে হাফ ভাড়া চাওয়া ছাত্রদের অধিকার। এই ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে বাস মালিকদের তা মেনে নিতে হবে। আর সরকার যদি ভর্তুকি দিতে চায়- তাহলে সেটাও সরকারের ব্যাপার। তবে ভর্তুকি চাওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া চাওয়া শিক্ষার্থীদের ‘অধিকার’। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির জন্য এই অধিকার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের অবস্থান সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণের সময় ৭০ শতাংশ আসন গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ৩০ শতাংশ আসনের ভাড়াও ৭০ শতাংশ যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয়। অর্ধেক ভাড়া দিয়ে চলাচল করা শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু নয়; এটা তাদের অধিকারও। এটা রেওয়াজ, আইন না থাকলেও এই রেওয়াজ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই চলে আসছে। এখন হাফ ভাড়ার জন্য ভর্তুকি চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস মালিকরা বিআরটিএকে ভুল বুঝিয়েছে। কথিত সিটিং সার্ভিস, গেটলক সার্ভিস এবং ওয়েবিলের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে পরিবহন মালিকরাও উপস্থিত ছিলেন। দেড় ঘণ্টার বেশি দীর্ঘ এই বৈঠকের শুরুতেই পরিবহন মালিকরা হাফ পাস ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য সরকারের কাছে ভর্তুকি পাওয়াসহ কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। পরিবহন মালিকরা গত বৃহস্পতিবারও বিআরটিএ এর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সূত্র ধরেই গতকালের বৈঠক হয়। এছাড়া বাস মালিকদের পক্ষ থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব ও দাবি বৈঠকে তোলা হয়েছে। প্রস্তারগুলো আমরা বিবেচনা করে মন্ত্রণালয়কে জানাব এবং এই বিষয়ে খুব শিগগিরই আবার বৈঠকে বসব। শিক্ষার্থী?দের জন্য বাস ভাড়া কমা?নোর বিষ?য়ে বিআর?টিএ অত্যন্ত আন্ত?রিক। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাসে হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতারাও আন্তরিক। কিন্তু এতে তাদের যে ক্ষতির কথা বলা হয়েছে তা কীভাবে পূরণ করা হবে, কত ভর্তুকি দিতে হবে তা নির্ধারণে সরকার ও পরিবহন সম্পৃক্তদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সরকারকে টাস্কফোর্সের বিষয়ে জানানো হবে। আমরা আবারো বৈঠকে বসব। টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, ছাত্র সংখ্যা কত এবং কতজন ছাত্র বাস ব্যবহার করে তার একটা পরিসংখ্যান পরিবহন নেতারা চেয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই তথ্য জানাবে।
মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা কিছু দাবি পূরণের জন্য বিআরটিএ এর মাধ্যমে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। দা?বি-দাওয়া পূরণ হ?লে খুব শিগগিরই পরবর্তী? সময় বৈঠ?কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নে?য়া হ?বে। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ঢাকার ৮০ শতাংশ বাস মালিক গরিব। হাফ ভাড়া নিলে মালিকদের যে ক্ষতি হবে তা কীভাবে পূরণ করা যায়- সেই বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের অনুরোধ করব আপনারা হাফ ভাড়ার দাবিতে বাস ভাঙচুর, শ্রমিকদের মারধর না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান। আমরাও আপনাদের দাবি পূরণের জন্য চেষ্টা করছি।
এর আগে শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিসি বাসে ৫০ শতাংশ ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বিআরটিসি দুই একদিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।