মাহমুদুর রহমান মান্না : খালেদা জিয়া এখন তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন

আগের সংবাদ

ওমিক্রন ঠেকাতে চার সুপারিশ

পরের সংবাদ

বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দুই যুগেও হয়নি সংস্কার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুল আহসান কল্লোল, নীলফামারী থেকে : ডিমলা উপজেলার ২নং বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দরখাতা থেকে দক্ষিণ সুন্দরখাতা পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি. বুড়ি তিস্তার বাঁধটি দেশ স্বাধীনের আগে নির্মিত। ১৯৮৮ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে বন্যার পানিতে বাঁধটি ভেঙে যায়।
মরহুম রহিমুদ্দিন খট্টু মিয়ার উদ্যোগে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম ও জমির মালিকদের নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধটি একসময় বাঁধা হলেও পুনরায় উজানের পানির ঢলে ভেঙে যায়। বর্তমানে বাঁধটির ভাঙা অংশ সংস্কারের অভাবে এলাকার কৃষকের জমিগুলো কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটছে। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও বুড়িতিস্তা নদীর পূর্বপাশ ঘেঁষে কচুবাড়ীর দলার বাঁধটি মেরামত করা হয়নি।
মেরামত না হওয়ায় নিজ সুন্দরখাতা, মধ্যম সুন্দরখাতা, দক্ষিণ সুন্দরখাতা গ্রামের প্রায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করতে পারেন না এ এলাকার কৃষকরা। ফলে প্রতিনিয়ত কৃষকরা অভাব-অনটনের মধ্যে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। তাই বাঁধটি দ্রুত মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।
১৬ নভেম্বর সরজমিন দেখা গেছে, ডিমলা সদর উপজেলা থেকে ৫ কি.মি. দূরে বুড়িতিস্তা নদীর পূর্বপাশ ঘেঁষে বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দর খাতা মাইঝালীর ডাঙ্গা গ্রামের কচুবাড়ীর দলায় অবস্থিত বাঁধটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না, প্রায় দুই যুগ আগে উজানের পানির ঢলে বাঁধটি ভেঙে গিয়েছিল।
বন্যার পানিতে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ পর্যন্ত এলাকার গরিব-অসহায় কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারে না। ইরি ধান মৌসুমে ধান চাষাবাদ করলেও ইরি ধান কাটা মৌসুমে বুড়িতিস্তা নদীর পানি বাঁধটির ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ে। এতে ইরি ধান মৌসুমে চাষাবাদকৃত পাকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মধ্যম সুন্দর খাতা মাঝিয়ালীর ডাঙ্গা বিদ্যালয়টির মাঠ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে বিদ্যালয়টির ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বাঁধটি বন্যায় ভেঙে যাওয়ায় সুন্দরখাতা কচুবাড়ীর দলা থেকে খোকসারঘাট ব্রিজের উজানের জমিগুলো আমন মৌসুমে চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। জমিগুলোতে এক ফসলি চাষাবাদ করে এ এলাকার কৃষকরা দৈনন্দিন মানবেতরভাবে জীবনযাপন করে আসছেন। কৃষকদের অধিকাংশ জমি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সাবেক সংসদ সদস্য এন কে আলম চৌধুরী ও সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়েদুল আরেফিন জানান, বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধটি দুই যুগ আগে বন্যায় ভেঙে যাওয়ার ফলে আমাদের জমিগুলোতে আমন ধান রোপণ করতে পারি না।
যদিও কৃষকরা জমিগুলোতে হালচাষ করে আমন ধান রোপণ করে বর্ষা মৌসুমে বুড়িতিস্তা নদীর পানি ঢুকে আমন মৌসুমে রোপণকৃত ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। দেশের খাদ্য চাহিদার বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বুড়িতিস্তা নদী খনন ও বাঁধটি মেরামত করলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন।
জমির মালিক শাহ আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বুড়িতিস্তা নদী খনন ও বাঁধটি সরকারি বরাদ্দে মেরামত করা হলে বাঁধের ভাটির জমিগুলোতে এ এলাকার জমির মালিকরা আমন ও ইরি মৌসুমে দুই ফসলের ফসল নির্ভয়ে ঘরে তুলতে পারবে, জমিগুলো এক ফসলি থেকে দুই ফসলে রূপান্তরিত হবে বলে তিনি জানান।
২নং বালাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা আমন ধান রোপণ করতে পারেন না। বন্যার কবল থেকে বাঁধটি মেরামত করা জরুরি প্রয়োজন বলে মনে করি। তিনি বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধটি মেরামতের কথা তুলে ধরব। আগামীতে দ্রুত সময়ে বাঁধটি মেরামত করা হলে এলাকার কৃষকের দুঃখ লাঘব হবে। জমিগুলো আর এক ফসলি থাকবে না। এ এলাকার কৃষকরা ইরি ধানের ওপর আর নির্ভরশীল না থেকে আমন মৌসুমে যাতে জমিগুলোতে ধান রোপণ করতে পারে সে জন্য সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আফতাব উদ্দিন সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী বলেন, বাঁধটি মেরামত হলে জমিগুলোতে আমন ধান রোপণ করা সম্ভব। স্থানীয় কৃষকের খাদ্য চাহিদা মিটেয়ে দেশের জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এ এলাকার কৃষকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়