মাহমুদুর রহমান মান্না : খালেদা জিয়া এখন তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন

আগের সংবাদ

ওমিক্রন ঠেকাতে চার সুপারিশ

পরের সংবাদ

প্রাথমিকে কমছে শিক্ষার্থী : সুবর্ণচরে সরকারি জমি দখল করে মাদ্রাসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি বেড়িবাঁধ এবং বন বিভাগের গাছ কেটে গড়ে তোলা হয়েয়ে একটি মাদ্রাসা। এর প্রভাবে দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। এ নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরা।
সম্প্রতি সরজমিন গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় একটি চক্র দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক থেকে দেড়শ ফুটের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে এবং বন বিভাগের গাছ কেটে মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা নামে একটি নুরানী (কওমি) স্থাপন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ওই মাদ্রাসাটি সুকৌশলে দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে নেয়।
দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাসেম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই অবৈধভাবে মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা গড়ে তোলায় করোনাকালে অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দেখা দিয়েছে। আমরা নানা চেষ্টা করেও তাদের বিদ্যালয়মুখী করতে পারছি না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল বাসার, মো. সাইফুল ইসলাম, কংকর চন্দ্র দাস ও সীমান্তী বালা দাস বলেন, এ মাদ্রাসায় ৩ শতাধিক ছাত্রছাত্রী থাকলেও বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণিতে ৮ জনের মধ্যে নিয়মিত ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৪ জনের মধ্যে নিয়মিত ৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২১ জনের মধ্যে নিয়মিত ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে নিয়মিত ১৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৬০ জনের মধ্যে নিয়মিত ৩১ জন শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয়ে মোট ৫৮ জন ছাত্রছাত্রী নিয়মিত উপস্থিত হয়। অথচ এই বিদ্যালয় থেকে বিগত বছরে ৮ জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তিসহ মোট ১৪ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিত) মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই জায়গাটি দখল সূত্রে ক্রয় করেছি। সেখানে অস্থায়ীভাবে মাদ্রাসাটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে আমরা ওই জায়গা থেকে বন বিভাগের কোনো গাছ কাটিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের সেলিম বলেন, ওই মাদ্রাসাটি গড়ে তোলার শুরুতেই আমরা বাধা দিয়েছি। মাদ্রাসার মালিকানায় থাকা ব্যক্তিরা বলেছে এটা তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে করছেন। তারা মাদ্রাসার জন্য জায়গা ক্রয় করেছেন, শুকনো মৌসুমে তাদের নিজস্ব জায়গায় মাদ্রাসাটি সরিয়ে নিয়ে যাবেন। যেহেতু এখনো তারা মাদ্রাসা সরিয়ে নেননি, তাই খুব শিগগিরই আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবো।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি বিস্তারিত অবগত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা বন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, এ বিষয়টি ২ বছর আগের। তবে বন বিভাগের গাছ কাটা হয়েছে কিনা তা পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতি সর্ববিদ্যা জানান, মাদ্রাসার কারণে যদি সরকারি বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়ে তাহলে এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়