মাহমুদুর রহমান মান্না : খালেদা জিয়া এখন তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন

আগের সংবাদ

ওমিক্রন ঠেকাতে চার সুপারিশ

পরের সংবাদ

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রয়োজন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের দ্বিতীয়, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জিডিপিও বৃদ্ধি হতে থাকল। কিন্তু‘ এই জিডিপি যাদের জন্য প্রবৃদ্ধি হলো আজকে তারা উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিন যেভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেভাবে তো শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। অথচ এই গার্মেন্টসগুলোতে যারা চাকরি করে সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তারপরও তাদের মজুরি নিয়ে চলছে তালবাহানা। রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়ানো হলো। ফলে তৈরি পোশাক শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি দাঁড়াবে ৮ হাজার টাকা। বর্তমানে তাদের নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নতুন করে নির্ধারণের জন্য একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ শতাংশ বৃদ্ধিতে অর্থাৎ ৬ হাজার ৩৬০ টাকা দিতে রাজি হয় মালিকপক্ষ। সর্বশেষ মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভায় গত ১৬ জুলাই ২০১৮ এ প্রস্তাব করেন গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এদিকে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যখন ব্যবধানে বিস্তর পার্থক্য হয় বর্তমানে একজন নতুন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এই রকম সর্বনিম্ন মজুরি দিয়ে পরিবার পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার কোভিডের বিষ থাবা যুক্ত হওয়াতে এ সমস্যা মহা আকার ধারণ করল। ফলে বর্তমানে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়। যেটা নিয়ে বর্তমানে শ্রমিকরা বারবার রাস্তায় আন্দোলনে নামছে।
আইএলও ১০০ ডলারের নিচে বেতন যেই যেই দেশের তার একটি তথ্য দিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সিএনএন একটা তথ্য প্রতিবেদনে দেখিয়েছিল আমেরিকাতে তৈরি একটি ডেনিম শার্টের মজুরি পড়ে ৭.৪৭ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে তৈরি শার্টটির মজুরি পড়ে দশমিক ২২ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ টাকা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের মজুরি কাঠামোকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে ২০০৬ সালে দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি গার্মেন্টস পণ্য ইউরোপে বা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০০ ডলার বিক্রি হলে কারখানার মালিক পান ১৫-২০ ডলার, উৎপাদিত রাষ্ট্র ২৫-৩০ ডলার এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ৫০-৬০ ডলার পেয়ে থাকে। উৎপাদনকারী শ্রমিকের ভাগে পড়ে মাত্র ১ ডলার। শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতে পোশাক শিল্পে শ্রমিক মজুরি পুনর্নির্ধারণের দাবির যৌক্তিকতা আছে বৈকি। লক্ষ্য রাখতে হবে এ খাতে কোনো উপায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশে এই শিল্পের বর্তমান সুনাম নষ্ট করার পেছনে কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেয়া যাবে না। এমনও হতে পারে বাংলাদেশে এই শিল্পের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত অবস্থান নষ্ট করে এই বাজারকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূরপ্রসারি চিন্তার কাজ করতে পারে কোনো বিদেশি চক্র। যাদের ঘর্মাক্ত শ্রমের বিনিময়ে আজ আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছি তাদের শ্রমের মূল্য ও জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। যদি এখন রাষ্ট্র তাদের দিকে সহানুভূতি না হয় তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিরাট ধাক্কা আসবে। যেটা হয়তো বা আমাদের পোশাক শিল্পকে সারাজীবনের জন্য ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই পোশাক শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের মাঝে কোনো অস্থিরতা তৈরি করার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাদের প্রাপ্য মজুরি অবশ্যই দিতে হবে।

মাজহারুল ইসলাম শামীম : শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়