মাহমুদুর রহমান মান্না : খালেদা জিয়া এখন তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন

আগের সংবাদ

ওমিক্রন ঠেকাতে চার সুপারিশ

পরের সংবাদ

জয়ে শুরু রাসেলের স্বাধীনতা কাপ যাত্রা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রায় তিন বছর মাঠে গড়িয়েছে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল। উদ্বোধনী ম্যাচটা জয়ে রাঙালেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গতকাল দিনের প্রথম ম্যাচে উত্তর বারিধারা ক্লাব ১-০ গোলে হারিয়েছে শেখ রাসেল। জয়সূচক গোলটি করেন মান্নাফ রাব্বি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দিনের অপর ম্যাচে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
এক মাসের বিরতি শেষে ঘরোয়া ফুটবল ফিরেছে মাঠে। তবে ফেডারেশন কাপের আগে এবার মাঠে গড়িয়েছে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম দিন কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মাঠের লড়াইয়ে ফেরে উত্তর বারিধারা ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। তবে কমলাপুরে ম্যাচের প্রথমার্ধে সাফল্যের দেখা পায়নি কোনো দল। আক্রমণে অবশ্য বেশ এগিয়ে ছিল শেখ রাসেল। উত্তর বারিধারা ক্লাব আক্রমণের চেয়ে রক্ষণেই বেশি সময় কাটিয়েছে। সুযোগ বুঝে তারাও শট নিয়েছে কিন্তু তাতে মেলেনি সাফল্যের দেখা। তাদের তুলনায় শক্তিশালী দল শেখ রাসেলের ফুটবলাররাও নিজেদের রাঙাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতা নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে দুই দল।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে সাফল্য পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি শেখ রাসেলকে। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে তারা পেয়ে যায় সাফল্যের দেখা। এতে অবশ্য অবদান ছিল উত্তর বারিধারা ক্লাবের গোলরক্ষকেরও। তার নির্বুদ্ধিতায় ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ক্লাবটি। প্রতি আক্রমণে শেখ রাসেলে ডিফেন্স থেকে বল যায় মাঝ মাঠে। সেখান থেকে লম্বা শটে বারিধার উদ্দেশে বল পাঠায় রাসেলের মিডফিল্ডাররা। গোলরক্ষক ডি-বক্সের প্রায় বাহিরে থাকায় বলের নাগাল পাননি। একই সময় দ্রুতগতিতে গিয়ে জালের উদ্দেশে এগিয়ে যাওয়া বলকে পা লাগিয়ে গোল নিশ্চিত করেন রাসেলে ফরোয়ার্ড মান্নাফ রাব্বি। এরপর ম্যাচে ফেরার অনেক চেষ্টা করেও সাফল্যের দেখা পায়নি বারিধারা। মান্নাফ রাব্বিরাও গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেননি। ফলে ১-০ গোলে শেষ হয় ম্যাচ। তাতে গত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগে ১১তম স্থানে থেকে শেষ করা শেখ রাসেল স্বাধীনতা কাপের শুরুটা রাঙিয়েছে জয় দিয়েই।
আজ দিনের প্রথম ম্যাচে বিএসএস মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষে। দিনের অপর ম্যাচে সন্ধ্যা ৬টায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব মাঠে নামবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে।
স্বাধীনতা কাপের গ্রুপপর্বের ম্যাচ শেষ হবে আগামী ৮ ডিসেম্বর। এরপর ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শেষ আটের ম্যাচ। চার গ্রুপ থেকে পয়েন্ট তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে। এরপর ১৪ ডিসেম্বর হবে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ম্যাচ। আর ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে এবারের স্বাধীনকা কাপ ফুটবলের ১১তম আসর।
১৯৭২ সাল থেকে চলে আসা এই টুর্নামেন্টের চলতি আসর হবে ১১তম আসর। সংস্কারকাজ চলমান থাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এ মৌসুমে কোনো ম্যাচ হবে না ঘরোয়া ফুটবলে। তাই এবার স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ হবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে- স্বাধীনতা কাপের ফাঁকেই ১১-২২ ডিসেম্বর কমলাপুরে হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল। ২টি টুর্নামেন্ট একসঙ্গে কমলাপুরে পরিচালনার ব্যাপারে টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠানে বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘সাফ সচিবলায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ২টি টুর্নামেন্ট চালাব আমরা কমলাপুরে। সেখানে ফ্লাডলাইট আছে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। নারী ফুটবলের দিন স্বাধীনতা কাপের ম্যাচ রাখা হবে না।’ কিন্তু কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা খেলার অনুপযোগী। এই টার্ফে খেলে ফুটবলাররা চোটে পড়েন অনেক বেশি। খেলার মান ভালো হয় না। মূলত নিচের দিকে লিগগুলো এখানে হয়। শীর্ষ স্তরের কিছু ম্যাচও হয়েছে আগে। তবে ইতোপূর্বে মোহামেডানসহ প্রিমিয়ার লিগের বেশ কয়েকটি দল কমলাপুরে খেলতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এবার স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ এই মাঠে আয়োজনে অনড় বাফুফে। অনেকে বলছেন, সব দলকে ঢাকার বাইরে নিয়ে স্বাধীনতা কাপ আয়োজন করা যেত। যেমন সিলেট স্টেডিয়ামের কথা বলছেন অনেকে। এমন উদ্যোগ কি নেয়া যেত না? এমন প্রশ্নে সালাম মুর্শেদী আর্থিক ও করোনাকে কারণ হিসেবে দেখান, ‘করোনা একটা সমস্যা। তাছাড়া আমরা সব ক্লাবকে সিলেটে নিলে খরচ হতো অনেক। সিলেটে গেলে ঢাকার মতো প্রচার হতো না। তাই কমলাপুরে করা।’ অনেকে অবশ্য বলছেন, মূলত আর্থিক কারণেই ঢাকার বাইরের স্বাধীনতা কাপ আয়োজনে চিন্তা করেনি বাফুফে। সালাম অবশ্য বলেন, ‘সব দল শেষ পর্যন্ত কমলাপুরে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ কমলাপুরে খেলতে রাজি হয়েছে।’

প্রশ্ন এসেছে রেফারিং নিয়েও। ঢাকার রেফারিরা অনেক কিছু এড়িয়ে যান। কিন্তু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পার পান না বাংলাদেশের ফুটবলাররা। সম্প্রতি যেমন মালদ্বীপে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যেমন পেনাল্টি পেয়েছে, আবার শেষ দিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে পেনাল্টিও হয়েছে। যার পরিণতিতে ২টি টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশ খেলতে পারেনি ফাইনালে।
কাজেই ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিং উন্নত করার বিকল্প নেই বলছেন সবাই। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমরা রেফারিংয়ের মান উন্নয়নে গত সপ্তাহে একটি কোর্স করেছি। রেফারি ভুল সিদ্ধান্ত দিলে সব চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া হয়। অতীতের ভুল শুধরে আমরা এগিয়ে যাব। রেফারিংয়ের প্রতি আরো নজর দেব।’
এদিকে প্রিমিয়ার লিগের ১২ দলের সঙ্গে স্বাধীনতা কাপে এবার যোগ করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীকে। অবশ্য বাফুফে স্বাধীনতা কাপে অন্তত ১৬টি দল আশা করেছিল। কিন্তু তিনটির বেশি দল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) বাফুফের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি। ১৫ দলকে গতকাল লটারির মাধ্যমে চার গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ৩ গ্রুপে ৪টি করে দল, একটি গ্রুপে আছে ৩টি দল। ৩ দলের গ্রুপ ‘এ’। এই গ্রুপটিতে শিরোপাপ্রত্যাশী আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে আছে প্রিমিয়ারে নবাগত স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ ও রহমতগঞ্জ।
‘ডি’ গ্রুপকে কেউ কেউ ‘মৃত্যুকূপ’ বলছেন। এই গ্রুপে আছে বসুন্ধরা কিংস, চট্টগ্রাম আবাহনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও নৌবাহিনী। বাংলাদেশ ফুটবলে জায়ান্ট ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন তারা। আবার স্বাধীনতা কাপের সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়নও বসুন্ধরা কিংস। তাদের পরে ঘরোয়া ফুটবলে আরেক জায়ান্ট ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী। মৃত্যুর কূপ বলতে হবে ‘সি’ গ্রুপকেও। এই গ্রুপে খেলছে মোহামেডান, সাইফ স্পোর্টিং, মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়