লজিক প্রকল্প : রৌমারীতে সোলার পাম্প স্থাপন শুরু

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি : বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে > ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য : দেড় বছরেও বহাল তবিয়তে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সচিব!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, রাজশাহী : ৩০ লাখের পরিবর্তে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ দাবি করা রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি দেড় বছরেও। গত বছর ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়েছে রহস্যজনকভাবে। অথচ সচিবের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রায় ২০ মাস পর মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও রাজশাহীর কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী বিতর্কিত মন্তব্য করে বহিষ্কার হয়েছেন দল থেকে। এ দুই নেতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক দলীয় ব্যবস্থা ছাড়াও দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। তারা মেয়র পদ হারানোর পাশাপাশি গ্রেপ্তার হতে পারেন যে কোনো মুহূর্তে। অথচ একই অপরাধ করেও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন দেড় বছর ধরে সচিব পদেই বহাল রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই দিন প্রতিষ্ঠানটিতে উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু কর্নার। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় বক্তব্য রাখেন, শিক্ষ বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমি ইতিহাসের শিক্ষক। ইতিহাস নিয়ে আমার গবেষণা রয়েছে। আমি গবেষণা করে পেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়নি। একটি শূন্য বাড়িয়ে বলা হয়। আসলে শহীদ হয়েছেন ৩ লাখ। ওই অনুষ্ঠানে বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর মোকবুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ ও সচিবের অপসারণ দাবি এবং ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এ বছরের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি। পরে ২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিসে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে। কমিটির প্রধান ছিলেন, রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলম। কমিটির অন্য দুই সদস্য করা হয় রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ এফ এম বজলুল কবীর ও রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন রেজাকে। তদন্ত কমিটি শিক্ষা বোর্ড সচিবের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের সত্যতাও পায়। তবে রহস্যজনকভাবে জমা দেয়া হয়নি সেই তদন্ত প্রতিবেদন।
সূত্রমতে ড. মোয়াজ্জেম ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর রাজশাহী শিক্ষ বোর্ডে প্রেষণে নিয়োগ পান। তিন বছর মেয়াদে তার এ নিয়োগ নিয়েও বিপত্তি রয়েছে আইনে। শিক্ষা বোর্ডের অর্ডিন্যান্স মোতাবেক বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের বোর্ডে প্রেষণে নিয়োগের বিধান নেই। এতে সরকারের ডেপুটেশনের বিধানও লঙ্ঘন হয় চরমভাবে।
তবে অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘন করে প্রেষণে নিয়োগ সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের ডেপুটেশন দিয়ে শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ শুরু করেন। বিসিএস শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান করানোর কথা থাকলেও তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা না হয়েও দখল করে নেন প্রশাসনিক পদ। ফলে ভেঙে পড়তে শুরু করে শৃঙ্খলা।
এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যতম অতিথি প্রফেসর মোকবুল হোসেন বলেন, তদন্ত রিপোর্ট ফ্রিজের মধ্যে রয়েছে। দেশের ইতিহাসকে যারা বিকৃতি করে, তারা কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এসব ইস্যুতে দেশের আপামর জনতাকেও সোচ্চার হওয়া উচিত।
তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়