লজিক প্রকল্প : রৌমারীতে সোলার পাম্প স্থাপন শুরু

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি : বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে > ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

পরের সংবাদ

খালেদার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দলে : শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণই বড় দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতা বাড়ছেই। একই সঙ্গে বাড়ছে নেতাকর্মীদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, সমস্ত লক্ষণ লিভার সিরোসিসের দিকেই এগোচ্ছে। কিডনির ক্রিয়েটিনিন হু হু করে বর্ডার লাইন ক্রস করছে। নতুন করে তার শরীরের ভেতরে যে রক্তক্ষরণ সেটিই চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায় শেষ ভরসা বিদেশের কোনো হাসপাতালে ‘অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট’ দেয়া।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। গত ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তার হিমোগেøাবিন কমে যায়। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। গত বুধবার সন্ধ্যায় তার এন্ডোস্কপি ও কোলনস্কোপি করা হয়েছে। তবে রক্তক্ষরণের জায়গাটি চিহ্নিত করা যায়নি। তিনি (খালেদা জিয়া) মুখে খাবার খেতে পারছেন না। খাবারের ঘাটতি পূরণ। হচ্ছে স্যালাইনের মাধ্যমে। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান সিঁিথ হাসপাতালে তার সেবাযতœ করছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই মুমূর্ষু। চিকিৎসকদের পক্ষে যতটা সম্ভব, তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলোর কোনো একটিতে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ‘স্লো পয়জন’ দেয়া হয়েছিল কিনা- এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ইতিবাচক কথাবার্তায়ও দলটির নেতাকর্মীরা চিন্তামুক্ত থাকতে পারছেন না। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুজব নেতাকর্মীদের প্রতি মূহর্তে আতঙ্কে ফেলছে। ফলে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ

মাধ্যমে তার রোগমুক্তি কামনা করে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। ঢাকায় থাকা সিনিয়র নেতাদের কাছে ফোন করেও দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা জানতে চাইছেন তারা। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে তারা দলীয় কর্মসূচিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, দলীয় চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন খবরে বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। ঢাকায় অবস্থান করা নেতাকর্মীরা অনেকেই ফোন করেও তাদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কঠিন বিপদেও ম্যাডাম (খালেদা) মনোবল শক্ত রাখতে পারেন। যতটুকু খোঁজ নিয়েছি, এখনো তার মনোবল বেশ শক্ত। আশা করি, এই অবস্থায় সৃষ্টিরকর্তার কৃপায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার অসুস্থতার খবরে নেতাকর্মীসহ দেশের সাধারণ মানুষও তার জন্য প্রার্থনা করছেন। আমি শুনেছি, মুসলমান ভাইবোনেরা নফল রোজা রেখেছেন, নামাজও আদায় করছেন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রার্থনা ফেলে দিতে পারবেন না বলে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসার জায়গায় রয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে; এমন খবরে সারাদেশে দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী-সমর্থকসহ দেশবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা তার সুচিকিৎসার দাবি আদায়ে সব ত্যাগ স্বীকার করতে রাজপথে থাকব।
খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত তাঁর উপর নজর রাখছেন বিশেষ চিকিৎসক দল। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসেছিলেন। যদিও তার চিকিৎসা এখন আর এখানে নেই। তবুও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে রিপোর্ট দেখে তারা নতুন করে আবার পরামর্শ দেবেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখে এসে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। আজকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো উচিত। খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় মিনিট, কয় দিন বাঁচবেন সেটা আমি বলতে পারব না। তাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি মিনিটে তার জীবনীশক্তি কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা সংকটাপন্ন’ বিএনপির এই বক্তব্যকে প্রকাশ্যে মানতে নারাজ সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে গত মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সৃষ্ট গুজবের পর নতুন করে ভাবছে সরকার। সরকারের দিক থেকে কিছুটা নমনীয়তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের আগের আবেদনটি নিয়ে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়। গত বুধবার তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানও এমনটি বলেছেন। সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে। এই বয়সে শারীরিক কিছু জটিলতা থাকে; তার প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে। সরকার তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করছে। বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় বিশ্লেষণ করছে। দোয়া করি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে করা ওই আবেদনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সরকারের নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া আছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হলে কী আইনি প্রক্রিয়া আছে তা খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ পেলে এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে চিকিৎসকদের মতামত পেলে এ বিষয়ে নমনীয় হতে পারে সরকার। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সরকারি দল ও সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি হলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দেশে-বিদেশে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে সরকার। সব দিকে চিন্তাভাবনা করে যখন যা দরকার সে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে সরকারের একটি সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে আইনানুগভাবে বিদেশে পাঠানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে স্বনামধন্য আইনজীবীদের মতামত নেয়া যেতে পারে। একইভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি আলাদা মেডিকেল বোর্ড করার সুপারিশও করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়