লজিক প্রকল্প : রৌমারীতে সোলার পাম্প স্থাপন শুরু

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি : বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে > ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

পরের সংবাদ

এবার ময়লার গাড়ির শিকার সংবাদকর্মী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলন চলার মধ্যেই এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বেপরোয়া আরেকটি ময়লার গাড়ি। রাজধানীর পান্থপথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ি ধাক্কায় নিহত হয়েছেন আহসান কবির খান (৫০) নামে ওই ব্যক্তি। তিনি রাইড শেয়ারিং

‘পাঠাও’-এর মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনায় ঘাতক ময়লার গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে এর চালক পালিয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে পান্থপথ শাপলা ফার্নিচার দোকানের সামনের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ময়লার গাড়ির চাকা নিহত কবির খানের মাথার উপর দিয়ে উঠে যাওয়ায় ভয়ে তাকে বহনকারী পাঠাও চালক পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে ঘাতক ময়লার গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ইতোমধ্যে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।
নিহতের মামাতো ভাই মিজানুর রহমান জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেরজুত গ্রামের আবদুল মান্নান খানের ছেলে নিহত কবির। এক ছেলে এক মেয়েসহ স্ত্রী নাদিরা পারভিন রেখাকে নিয়ে বড় মগবাজার সোনালীবাগ চান বেকারি গলির ৫৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। রাজধানীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণিতে পড়ে তার ছেলে সাদবান শাহরিয়ার কাইফ (১৫) ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে মেয়ে সাফরিন কবির দিয়া (১০)।
মিজানুর রহমান আরো জানান, তিনি দীর্ঘদিন একটি জাতীয় দৈনিকে পেস্টিং বিভাগে কাজ করতেন। সাত বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করেন। চলতি মাসে আরেকটি জাতীয় দৈনিকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। একই সঙ্গে পেইজ মেকআপের কাজ করতেন। এছাড়া গার্মেন্টস এক্সেসরিজেরও ব্যবসা ছিল তার।
নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভিন রেখা বলেন, কবির মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। তখন বলে যান, ব্যবসার কাজে তাকে ২-৩ জায়গায় যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে যাবেন মিরপুরে। দুপুরে তারা খবর পান কবিরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে কবিরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন স্ত্রী।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান জানান, পাঠাও-এর মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন আহসান কবির। পান্থপথে ডিএনসিসির একটি ময়লা বহনকারী ডাম্পিং ট্রাক পিছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে আহমেদ কবির নিচে পড়ে গেলে ময়লার ট্রাকটির চাকা তার মাথার উপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরো জানান, এই দুর্ঘটনা দেখে তাকে বহনকারী পাঠাও-এর মোটরসাইকেল চালক দ্রুত মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেছে। তবে ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। এর চালক পালিয়ে গেছে। তাকে আটক করতে অভিযান চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার গুলিস্তানে ডিএসসিসি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। এ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা সহপাঠী নিহতের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে আসছেন।
নটর ডেম শিক্ষার্থীর মৃত্যু, তিন জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হারুন মিয়া ও মো. আবদুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। আর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে গাড়িচালক (ভারী) মো. ইরান মিয়াকে। নাঈম হাসানকে চাপা দেয়া গাড়িটি ইরান মিয়ার অনুকূলে বরাদ্দ ছিল। তিনি করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত গাড়িচালক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।
মো. আবু নাছের জানান, অবৈধভাবেই গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হারুন মিয়া ও গাড়ি চালানোর কাজে সহযোগিতা করায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. আবদুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র বলছে, নাঈম হাসানকে চাপা দেয়ার সময়ে গাড়িতে আরো তিনজন শ্রমিক ছিল। তারা হলো- রব্বানী, বিল্লাল ও রাসেল। তারা বাইরের শ্রমিক ছিলেন।
গত বুধবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে আরামবাগের নটর ডেম কলেজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ওই কলেজেরই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৭)। তবে অন্য দিনগুলোর মতো তিনি কলেজে পৌঁছাতে পারেননি, ক্লাসেও বসতে পারেননি। গুলিস্তানে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় মৃত্যু হয় তার। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত নাঈমকে পুলিশ ও পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়