লজিক প্রকল্প : রৌমারীতে সোলার পাম্প স্থাপন শুরু

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি : বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে > ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

পরের সংবাদ

অনলাইনে আইনি সেবা পাচ্ছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলবাসী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ বি সিদ্দিক, কুড়িগ্রাম থেকে : জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলসহ অবহেলিত এলাকার মানুষের আইনি সেবা সহয়তায় প্রায় এক মাস আগে জেলা জজ আদালতে চালু হয়েছে অনলাইন আইনি তথ্য সেবা কেন্দ্র। এরই মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের এ তথ্য সেবা কেন্দ্রের সুবিধা পেতে শুরু করেছে এখানকার নির্যাতিত ও আইনি সেবা নিতে আসা হয়রানির শিকার মানুষ।
তথ্য সেবা কেন্দ্র ও সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌতুক না দিতে পেরে ধারাবাহিক নির্যাতন শেষে স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কুড়িগ্রাম সদর এলাকার কোহিনুর আক্তার। বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া কোহিনুরের কাছে পাঠানো হয়েছে তালাকের কাগজও। নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচার পেতে এসেছেন কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে। কিন্তু কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে এই সেবা কেন্দ্রের খবর পান কোহিনুর আক্তার।
এই ভুক্তভোগী জানান, ফ্রেন্ডশিপ অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর পর এখন সমাধানের জন্য রাজি হচ্ছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ফলে জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন কোহিনুর।
তিনি জানান, এসব আইনি প্রক্রিয়ায় লাগেনি কোনো খরচও। কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম।
দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তরাধিকার সম্পত্তি উদ্ধারে। মামলার সুরাহা করতে এ পর্যন্ত পরিবর্তন করেছেন ৭ আইনজীবী। প্রতিপক্ষের প্রভাবে নিজের উকিলের কাছেও হেনস্তার শিকার হয়েছেন রহিমা। হতাশায় ডুবে থাকা রহিমা ফ্রেন্ডশিপ অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের সহযোগিতায় এখন অনেকটাই আশাবাদী তিনি। কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে প্রায় এক মাস চালু হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। এরই মধ্যে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রের সেবা।
এখানকার কর্তব্যরত প্যারালিগ্যাল এনামুল হক জানান, বিনা খরচে এবং অল্প সময়ে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় বলে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। তিনি জানান, ফ্রেন্ডশিপ অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে এখানকার অভিযোগের ৭০ ভাগই স্বামী-স্ত্রী বা পারিবারিক বিরোধ সংশ্লিষ্ট। বাকি সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, জমিজমা বা পাড়া-প্রতিবেশী বিরোধ। সেবা কেন্দ্র সম্পর্কে এই প্যারালিগ্যাল বলেন, এখানে অভিযোগকারী এলে প্রথমে একটি আবেদন ফর্মে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আইনি কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় তারা ঘরে বসে মামলা বা সালিশের তারিখ পায় এসএমএস-এর মাধ্যমে।
ফ্রেন্ডশিপের সহকারী পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের অর্থনৈতিক সংকট এতটাই বেশি যে, পরিবারের খাবার জোগানো তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেখানে আইনি সহায়তার জন্য খরচ করা তাদের পক্ষে খুবই কঠিন।
প্রান্তিক এলাকার মানুষের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার অভাব। ঠিকমতো যোগাযোগের অভাবে তারা প্রায়ই দালাল বা খারাপ লোকের খপ্পরে পড়ে যায়। প্রত্যন্ত এলাকার বিশেষ করে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা উপযুক্ত যোগাযোগ এবং সক্ষমতার অভাবে জেলা আদালতে যেতেও উৎসাহিত হন না।
ফলে ন্যায় বিচার বা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন অনেকে। জেলা আদালত ভবনে স্থাপিত আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সেসব বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আইনি সহায়তা কেন্দ্র বা লিগ্যাল বুথ স্থাপনের সুযোগ দেয়ায় জেলা লিগ্যাল এইডকেও ধন্যবাদ জানান ফ্রেন্ডশিপের এই কর্মকর্তা।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ব্যারিস্টার আয়েশা তাহসিন খান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর এবং চিলমারী উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চরাঞ্চলে বসবাস করে।
তাদের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দাদের জন্য জেলা আদালত ভবনে চালু করা হয়েছে ফ্রেন্ডশিপের ‘অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’।
ফলে অনলাইন বা অফলাইনে সব ধরনের আইনি সেবা পাবেন কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলসহ অবহেলিতা এলাকার বাসিন্দারা।
কুড়িগ্রাম ‘অনলাইন আইনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ চালু হওয়ায় প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিতদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা করছেন জেলার আদালত সংশ্লিষ্টরা।
আদালতে আইনি সেবা প্রাপ্তিতে ফ্রেন্ডশিপের এমন উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং কুড়িগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানসহ অনেকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়