বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

সংসদে রাষ্ট্রপতি : সব সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আর তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের নির্ধারিত তিনটি সূচক মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকের প্রতিটিতে নির্ধারিত স্কোরের বেশি অর্জন করায় চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে, যা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। প্রতিবেশী অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক এগিয়ে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকাল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তার নির্দেশনায় কৃষক-শ্রমিক ছাত্র-জনতা যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়, সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ‘স্বাধীনতা’। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তখন ঘাতকরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী পুত্র-পুত্রবধূসহ অনেককে হত্যা করে। তারা দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ দ্রুতগতিতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত নিষ্পত্তি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে দেশে স্বস্তি বিরাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সুশাসনের উদ্দেশ্যে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা, সিটিজেনস চার্টার এবং শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। এখন পৃথিবীর যে ১১টি দেশকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য ‘উদীয়মান এগারো’ বলে অভিহিত করা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও যে কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেণ্টার ফর ইকোনমিক এণ্ড বিজনেস রিসার্চ।
রাষ্ট্রপতি জানান, বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে এবং জিডিপির আকার ৬ গুণ বেড়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রপ্তানি প্রায় ৪ গুণ বেড়ে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে আজ ৪৮ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এডিপির আকার প্রায় ৯ গুণ বেড়ে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং কিছু কিছু সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এমডিজি অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বিশেষভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাসের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক এমডিজি পুরস্কারে ভূষিত হয়। আমাদের উৎপাদিত পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, ফুল, সবজি, মাছসহ অসংখ্য পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পোশাক রপ্তানিতে এবং ইন্টরনেটভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ‘উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’-এর সার্থক বাস্তবায়ন শেষে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন করছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সফল সমাপ্তিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ হয়েছে। প্রণীত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’। এর প্রেক্ষাপটে ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়ার লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এলক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২১-২০৪১ মেয়াদে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। সেইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যাপক শিল্পায়ন, অর্থনীতি সুসংহতকরণ, সুষ্ঠু অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। এলক্ষ্যে সবাইকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সবার ঐক্যসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমত সহিঞ্চুতা দরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়