বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী : উন্নয়নের বিস্ময় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়নের বিস্ময়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যহীন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলারূপে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক এই আমাদের প্রত্যয়। ক্ষমতাকে শুধু ভোগ করার বস্তু হিসেবে নয়, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে বলে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে।
গতকাল বুধবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন। বিশেষ আলোচনার জন্য ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে তিনি তার বক্তব্য পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের ওপর গতকাল বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে সংসদে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মহান শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য। যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন কিছু লোক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। পাকিস্তান হানাদাররা সারেন্ডার করেছিল ঠিকই, কিন্তু তারা তাদের কিছু দালাল যুদ্ধাপরাধী রেখে যায়। তারা আমাদেরই মুক্তিযুদ্ধের অংশকে হাতিয়ে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এত অল্প সময়ের

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা তাদের সহ্য হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তা পাকিস্তানি দোসররা মানতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসন শেষে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি রূপে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়। পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়- যা চলমান।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশরূপে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গৃহহীন ৯ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ প্রতিটি সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা অতিমারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ স্বঅর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রায় যুক্ত করেছে অনন্য মাইলফলক। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যে কাজটি বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, আর ৫টি বছর যদি তিনি সময় পেতেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতো। আজকে যে সম্মানজনক অবস্থায় আছে আমাদের বাংলাদেশ অর্থাৎ ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি, সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারতাম, যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে হত্যার পর সেই অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ সেখানেই পড়েছিল। দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে আনতে পেরেছি। মাত্র এই ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের মতো মহামারি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার কোটির মতো পেয়েছে দ্বিতীয় ডোজ আর বাকিরা এক ডোজ করে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না।
বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, আমরা এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের গোলাম হয়ে থাকতাম। তিনি বিশ্বের যেখানেই গেছেন অভূতপূর্ব সম্মান পেয়েছেন। তিনি তার ৭ মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি এ দেশে ফিরে না আসতেন তা হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা এ স্বাধীন ভূখণ্ড পেতাম না। তার সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন সে কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশের উন্নয়ন আজ বিশ্বে ঈর্ষণীয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুটি দলে বিভক্ত। এক শাসক অপরটি শোষিত, আমি শোষিতের দলে। তিনি ছিলেন বিশ্বের দরিদ্র নিপীড়িতদের নেতা। তিনি দেশের দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, বেনজির আহমেদ, সিমিন হোসেন রিমি, মীর মোস্তাক আহমেদ, শফিকুর রহমান, জাপার ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, সাইমুন সরওয়ার কমল, ইকবাল হোসেন, জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ, সুলতান মোহম্মদ মনসুর আহমেদ, জাপার আবু হোসেন বাবলা ও রেজাউল করিম বাবুল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়