বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

মিরপুর ও কুড়িলে বিক্ষোভ : গার্মেন্টস শ্রমিক মৃত্যুর গুজবে পুলিশের স্থাপনায় ভাঙচুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বেতন-ভাতার আন্দোলনে নেমে পুলিশের লাঠিপেটায় এক গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীর মিরপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা। এক পর্যায়ে পল্লবীর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও একটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তবে শ্রমিক মৃত্যুর খবরটি গুজব বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে গত মঙ্গলবার কয়েকজন পোশাক শ্রমিককে স্থানীয় দোকানিরা মারধর করেন। এতে দুজন আহত হন। আহত একজন মারা গেছেন শুনে বিক্ষোভে নামেন অন্য শ্রমিকেরা। প্রকৃত অর্থে দুজনই চিকিৎসাধীন। কেউ মারা যাননি।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে মিরপুর ১০ থেকে কাফরুল থানা সড়কে বিক্ষোভে নামেন পোশাক শ্রমিকরা। কাফরুল থানায় ইটপাটকেল ছোড়েন তারা। ভাঙচুর চালানো হয় মিরপুর ১০ ট্রাফিক

পুলিশ বক্সে। দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, মিরপুর ১০ থেকে ১৩ নম্বর সেক্টর হয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সড়কজুড়ে ইটের টুকরা ছড়িয়ে আছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আছেন ১৩ নম্বর সেক্টরের সামনে। দুপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। লাঠি, কাঠের টুকরা, লোহার পাইপ নিয়ে অবস্থান নেন তারা। এক পর্যায়ে ৫ ঘণ্টার বিক্ষোভ কমসূচি শেষে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে শ্রমিকদের অবস্থান ছিল। পুলিশ দেখলেই ঢিল ছুড়েছে। তবে পুলিশ লাঠিচার্জ বা কোনো অ্যাকশনে যায়নি। রাজন নামে ভিশন গার্মেন্টের একজন শ্রমিক বলেন, বেতন ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে আমরা তিনদিন ধরে আন্দোলন করছিলাম। মঙ্গলবার বিকালে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন মালিকরা। এরপর আমাদের ওপর হামলা করছে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হামলায় আমাদের শ্রমিক মারা গেছে। কে মারা গেছে, তার নাম জানতে চাইলে রাজন বলেন, ‘লালন নামে একজন মারা গেছে।’ তখন পাশ থেকে একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘লালন মারা যায়নি। ও বাসায় আছে।’ তাহলে কে মারা গেছে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মিরপুর ১৩ সেক্টরের সামনে বিক্ষোভে থাকা শ্রমিকরা।
শ্রমিক হত্যার তথ্য জানাতে না পারলেও পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া এবং স্থাপনায় ভাঙচুরের বিষয়ে শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা যখন শ্রমিকদের মারধর করে তখন পুলিশ চুপ ছিল, ফেরায়নি। এর জেরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এমডিএম গার্মেন্টের এক নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মঙ্গলবার মালিকরা আমাদের দাবি পুরো মানেনি। বলছে, আশপাশের গার্মেন্টগুলো বেতন বাড়ালে তারাও বাড়াবে। এই কথা শুনে অনেক শ্রমিক রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছিল। তখন একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। শ্রমিকদের কয়েকজনকে মেরে গুরুতর আহত করে। এর প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, ভাড়াটে সন্ত্রাসী নয় স্থানীয় দোকানিরা শ্রমিকদের মঙ্গলবার মারধর করেছে।
মিরপুর ১৩ নম্বরের ভিশন গার্মেন্টসের শ্রমিক লামিয়া বলেন, বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ আমাদের বেতন ও সুবিধাদি বাড়ানো হয়নি। তাই বেতন বাড়ানোর দাবিতে তিনদিন আগে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করেছি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার মালিকপক্ষের লোকজন সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে আমাদের কয়েকজন শ্রমিকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে দুইজন নিহত ও পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে গতকাল মিরপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে মিরপুর ১৩, ১৪ ও ১০ নম্বর ঘেরাও করা হয়েছে।
কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরেই শ্রমিকরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ করছিলেন। আমরা কোনো ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করেছি। আজকেও রাস্তা অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের একজন নাকি মারা গেছে। আমরা দুজন আহতের খবর পেয়েছি। গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। মৃত্যুর খবরটি গুজব। এই গুজব রাজনৈতিক ইন্ধনে ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুর। তিনি বলেন, গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। গার্মেন্টেসের শ্রমিক নয় এমন অনেক লোক লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। পুলিশের স্থাপনায় হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিষয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কুড়িলেও শ্রমিকদের বিক্ষোভ : গতকাল বেলা বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এতে স্থবির হয়ে পড়ে কুড়িল থেকে বাড্ডা অভিমুখী (প্রগতি সরণি) রাস্তা। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। প্রগতি সরণিতে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, বকেয়া বেতনের জন্য পোশাকশ্রমিকরা সকাল থেকেই কুড়িল রাস্তার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন। একপর্যায়ে তারা সড়ক ছেড়ে চলে যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়