বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

ধনী দেশ থেকে বেশি সুবিধা আদায়ে সরব এলডিসি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জেনেভায় ডব্লিউটিওর মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে এবার মূল এজেন্ডা থাকবে করোনায় দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। করোনাকেন্দ্রিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধনী দেশগুলো থেকে এবার বেশি বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা চাইবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি)। বিভিন্ন যৌক্তিক সুবিধা পেতে ঐক্যবদ্ধ ও সরব হচ্ছে এ তালিকার ৪৭টি দেশ। বাংলাদেশসহ উত্তরণ স্তরে থাকা বিশ্বের ছোট-বড় অর্থনীতির ১৬টি দেশও রয়েছে এ তালিকায়।
স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের এই অবস্থান জানান দেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে, সংক্ষেপে যা ‘এমসি-১২’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে। ৩০ নভেম্বর থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চারদিনের এ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৬৪টি দেশ। বর্তমানে এলডিসির সমন্বয়ক হচ্ছে আফ্রিকার দেশ চাদ। তবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে ডব্লিউটিওর সম্মেলনে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।
জেনেভায় ডব্লিউটিওর এই সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দিচ্ছেন। এ সম্মেলনে এবার মূল এজেন্ডা থাকবে করোনায় দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ। এ আলোচনায় আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ধনী দেশগুলোও। ফলে এ সম্মেলনে এলডিসিসহ ধনী-দরিদ্র সব দেশের জন্য এটিই আলোচনার প্রথম ও অভিন্ন আলোচ্য।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে যাতে ডব্লিউটিওর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এবং টেকনোলজি ট্রান্সফার কর্মসূচির আওতায় প্রদেয় সুবিধাগুলোর পরিধি বাড়ানো যায় এবং তা প্রাপ্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়, সে লক্ষ্যে জোটবদ্ধ আওয়াজ তুলবে এলডিসি এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে থাকা দেশগুলো, যেখানে বাংলাদেশ থাকবে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়। এ ছাড়া করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিষেধক এবং এর মেধাস্বত্ব যেন উন্নত দেশগুলো আটকে না রেখে সক্ষম অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তারও জোরালো দাবি তোলা হবে।
বর্তমানে এলডিসিভুক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ উত্তরণ স্তরে রয়েছে। এসব দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় ডব্লিউটিওর বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা বহাল রাখা-না-রাখা ইস্যুতেও সরব হবে। ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব সুবিধা আর থাকবে না। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে। শুধু মেধাস্বত্ব সুবিধা প্রাপ্তিতেই নয়, উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়বে। এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়বে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য রপ্তানিতে চাপমুক্ত থাকতে উত্তরণকারী দেশগুলোর সম্মেলনে অবস্থানও হবে অভিন্ন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের ডব্লিটিও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। এটি সব এলডিসিরও কমন ইস্যু। বিষয়গুলো হলো : কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি। গ্র্যাজুয়েশনের পর ১২ বছর জিএসপি সুবিধার প্রস্তাব ছিল এলডিসি গ্রুপের, যা পরে ৬-৯ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই সম্মেলনে সেটি আদায়ে চেষ্টা থাকবে। আমাদের এই দাবির সঙ্গে উত্তরণকারী দেশগুলো ছাড়াও সব এলডিসিরাই থাকবে। কারণ বাংলাদেশ যদি উত্তরণের পর চলমান সুবিধা ৯ বছর ভোগ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে মডেল দেখিয়ে একই রকম সুবিধা এলডিসিভুক্ত অন্য দেশগুলোও ভোগ করতে পারবে। এবারের সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত অগ্রাধিকার সুবিধা প্রাপ্তি এবং এ ক্ষেত্রে অসামাঞ্জস্য থাকলে তা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের নানা দিক। এরপর সেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে যেটা চূড়ান্ত হবে, সেটাই সিদ্ধান্ত আকারে আসতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীদের এই সম্মেলনে মোটাদাগে কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি’ এই তিনটি ইস্যুই গুরুত্ব পাবে। সম্মেলনে মূল এজেন্ডার বাইরে সাইডলাইনে আলোচনা হতে পারে এলডিসি প্রেফারেন্সিয়াল ইস্যু, রুলস অফ অরিজিনের শর্ত শিথিল, এলডিসিদের জন্য সার্ভিস ওয়েভার বৃদ্ধি, ই-কমার্সসহ ডব্লিউটিও সংস্কারের মতো আরও কিছু বিষয়ে। ফিশারিজ ভর্তুকির ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বিধিনিষেধ আসবে, অনিয়ন্ত্রিত সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ফিশিং, স্টক ফিশিং বা সাসটেইনেবল লেভেলের চেয়ে বেশি ফিশিং হয়ে গেছে এমন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ক্যাপাসিটি বা অধিক সক্ষমতা থাকলেও ভর্তুকি দেয়া যাবে না। আলোচনায় বাংলাদেশ এ দাবি তুলবে। পাশাপাশি অন্যদের মতো বাংলাদেশও এই সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুবিধা দাবি করবে।
এলডিসির এসব দাবির বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর মনোভাব কী জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গত প্রায় দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্যরা এরই মধ্যে নি¤œ আয়ের দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সেসব দেশকে বিশেষ কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়