নরসিংদীতে আটক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান

আগের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

পরের সংবাদ

‘ভাইব্বা ল কিং’র ৯ সদস্য গ্রেপ্তার : দিনে সশস্ত্র মহড়া রাতে ছিনতাই

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পেশাগতভাবে কেউ লেগুনা, অটোচালক, কেউ দোকানের কর্মচারী বা নির্মাণকর্মী। স্কুলের গণ্ডি পার হতে না-পারা এসব কিশোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিত। পাশাপাশি বানাত টিকটক ভিডিও, যেখানে দেখানো হতো সশস্ত্র চিত্র। আর তারা রাতে নেমে পড়ত ছিনতাইয়ে।
প্রায় ১৫-২০ জন মিলে গড়ে ওঠা এ চক্রটির সদস্যরা সবাই ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। গত দুই-তিন বছর ধরে রাজধানী মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া, ভাড়ায় শোডাউন করে আসছিল চক্রটি।
গত সোমবার দিবাগত রাতে চক্রটির ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্যাংয়ের প্রধান শরীফ ওরফে মোহন (১৮), সদস্য মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮), মো. জাহিদ (১৮), মো. নাঈম (১৪), মো. রুমান (১৮), মো. তামিম খাঁন (১৪) এবং মো. সজীব (১৭)। তাদের কাছ থেকে ৪টি লোহার দেশীয় তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, ২টি স্টিলের তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল, ৬৫ পিস ইয়াবা ও সেবনের সরঞ্জাম এবং ৩টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু এলাকাতে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য আসে র‌্যাবের কাছে। গত সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। তাৎক্ষণিক র‌্যাব-২ এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়েরবাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ।
তিনি জানান, ওই রাতেই র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দ তৎপরতা বাড়িয়ে চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং চক্রটির প্রধান মোহনসহ আরো ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র,

প্লাস্টিকের পিস্তল ও মাদক উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দুই-তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘লেবেল হাই গ্যাং’ এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তর্কোন্দলের কারণে ৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি ফেসবুক ও টিকটকে সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্যাং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায়। যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান, যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই একশ, গেঞ্জাম করার আগে ভাইব্বা লইও’।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, দুই/তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তাররা জানায়, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং।’ অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করত। ‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়