নরসিংদীতে আটক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান

আগের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

পরের সংবাদ

জলময়ূরের ছবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সবাই বিদেশি। কিন্তু কেউ গাঢ় কমলা রঙের, কেউ আবার সাদা-কালো। রং ভিন্ন তাতে সমস্যা নেই। একটি বিষয়ে দারুণ মিল। পানিতে থাকলেই সবাই খুশি। অঙ্কনের দিনের একটা বড় সময় কেটে যায় তাদের সঙ্গে। মাঝে মাঝে এক প্রজাতি ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে লড়াই করে। লড়াইটা পানিতেই হয়। যে পরাজিত হয় সে পানিতেই চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ে। এসব দেখে অঙ্কনের জিজ্ঞাসা বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত।
– মা, এই এ্যাকুরিয়ামের মাছগুলো কেন মিলে মিশে থাকে না? সাগর, নদী, পুকুরে তো বিভিন্ন ধরনের মাছ থাকে। সেখানে তো এমনটা হয় না।
কী জবাব দেবেন, তা ভেবে একটু চিন্তিত হন মা। কারণ জবাব মনমতো না হলেই আবার নতুন প্রশ্ন আসবে।
অঙ্কনের মা স্কুল শিক্ষক। তাই বাচ্চাদের এমন প্রশ্ন শুনে তিনি অভ্যস্ত। কিন্তু এখন তাড়াহুড়ো থাকায় বললেন- অঙ্কন, আমার স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে। ফিরে এসে তোমার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলবো। এখন তোমার যাবতীয় প্রশ্ন বাবাকে করো।
অঙ্কনের বাবার এখনো পত্রিকা পড়া শেষ হয়নি। ‘বিলুপ্তপ্রায় দুর্লভ জলময়ূরের সন্ধান মিলল হাওড়ে’ খবরটি পড়ছিলেন অঙ্কনের বাবা। জলময়ূরের ছবিটি দেখেই আগ্রহী হলো অঙ্কন।
– বাবা এই জলময়ূরটা কি ময়ূরের ভাই বোন?
– না, এটা একটা আবাসিক পাখি। যা বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দুর্লভ।
– বাবা, জলময়ূর দেখতে কী সুন্দর! আমি জলময়ূরের কাছে যাব। কবে নিয়ে যাবে আমাকে?
– অস্থির হবে না অঙ্কন। তোমরা বায়না মেটাতে শীত জেঁকে বসার আগেই আমরা জলময়ূর দেখতে যাবো। তোমার আম্মু স্কুল থেকে ফিরুক, তারপর পরামর্শ করে সব ঠিক করা যাবে।
কোথাও বেড়াতে গেলে, একটু ঘোরাঘুরি করলে অঙ্কনের মনটা অনেক খুশি থাকে, মা-বাবা এটা বুঝতে পারেন। আর এই বয়সে ওর মানসিক বিকাশের জন্যও এটা প্রয়োজন। সুতরাং তার জলময়ূর দেখার ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে। তিন দিনের ছুটিতে মা-বাবার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে যাবে অঙ্কন। আগামী শুক্রবার সকালেই ট্রেন।
বৃহস্পতিবার রাতে অঙ্কনের ঘুম আসছে না। কখন সকাল হবে, কখন ট্রেনে উঠবে- এই ভেবে অস্থির। আনন্দ ভাগাভাগি করতে অঙ্কনের একমাত্র ফুফুর মেয়ে স্বপ্নাও এবার সহযাত্রী। অঙ্কনের বয়স নয় বছর আর স্বপ্নার বয়স সাড়ে এগারো। দুজনের গলায় গলায় ভাব।
ট্রেনে স্বপ্না আর অঙ্কনের সিট পাশাপাশি। ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কোন ফাঁকে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেল অঙ্কন- সে হাওড়ের পাশে বসে আছে, সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য জলময়ূর…।
কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতেই পাঁচ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে গেল ট্রেন। অঙ্কনের তর সইছে না। তাই দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়েই হাওড়ের পথে রওনা হলো সবাই। অঙ্কন সঙ্গে করে ড্রয়িং খাতা আর রং পেন্সিল এনেছে। হাওড়ে যাওয়ার সময় এগুলোও সঙ্গে নিতে ভুললো না।
– অঙ্কন, রং পেন্সিল আর খাতা দিয়ে হাওড়ে কি করবি? অবাক হয়ে জানতে চাইল স্বপ্না।
– আপু, আমি জলময়ূরের সামনে বসেই জলময়ূর আঁকবো। চোখ নাচিয়ে জবাব দিল অঙ্কন।
বিশাল হাওড়ের পাড়ে বসে আছে অঙ্কন আর স্বপ্না। জলময়ূরের অপেক্ষায়। বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখা গেলো দূরে পদ্মপাতার ওপর লম্বা লেজের একটি পাখি দাঁড়িয়ে। অঙ্কন সঙ্গে করে একটি ছোট দূরবীনও নিয়ে এসেছে। দূরবীনে জলময়ূরের আকৃতিটা বড় হয়ে ধরা দিল তার চোখে।
অঙ্কনের মা-বাবা হাঁটাহাঁটি করছেন হাওড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য। স্বপ্না আর অঙ্কন হাওড় পাড়েই পত্রিকা বিছিয়ে বসে পড়ল। অঙ্কনের আঁকাআঁকি শুরু হয়ে গেলো। সেইসঙ্গে চলতে থাকলো প্রশ্ন করা।
– পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবির চেয়ে জলময়ূর পাখিতো বাস্তবে আরো সুন্দর, তাই না আপু? পদ্মপাতার আসল রং ফোটাতে আমি কোন রংটা দেব? জলময়ূরের লেজটা আনুমানিক কত ইঞ্চি?\
– অঙ্কন, এটা কোনো পরীক্ষা নয়। অনেকটা বিরক্তি নিয়েই বললো স্বপ্না।
– আপু, তুমি বুঝতে পারছো না, এটাও একটা পরীক্ষার অংশ।
সূর্য অস্ত যায় যায়। অঙ্কনের ছবি আঁকাও শেষ। তবুও হাওড় পাড় থেকে উঠতে চাইছে না।
বাবা তাড়া দিতেই বললো- ঢাকায় গেলে তো আমি আর হাওড়, জলময়ূর কিছুই দেখতে পাবো না।
– তা ঠিক আছে। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে, একটু পর অন্ধকারে কিছুই দেখা যাবে না। সুতরাং থেকেও লাভ নেই।
বাবার এই যুক্তি মেনে নিতেই হলো। ওরা ফিরে এলো রিসোর্টে।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, রিসোর্ট, হাওড় দেখে তিনদিনের ছুটি শেষ হয়ে এলো। সোমবার সকালেই ঢাকায় ফেরার ট্রেন।
ট্রেনে উঠার পর ফেলে আসা জলময়ূরের জন্য মনটা একটু বিষণ্ন হলো অঙ্কনের। এ্যাকুরিয়ামের ফিশগুলোকে যদি সুন্দর জীবন্ত জলময়ূর পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া যেতো… এমন ভাবনায় বিভোর অঙ্কন। কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয়, তারপরও শিশুমনের ভাবনাতো বাঁধহীন জোয়ারের মতো। দুপুরেই সবাই ঢাকা পৌঁছে গেল।
অঙ্কন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। এবার স্কুলে বিজয় দিবসের উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ‘যেমন ইচ্ছে আঁকো’ নামে একটা বিভাগ রাখা হয়েছে। তা দেখে অঙ্কন খুবই খুশি।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নির্ধারিত দিন বাবার সঙ্গে স্কুলে এলো অঙ্কন। সময় ৩০ মিনিট। এর মধ্যে চিত্রাঙ্কন শেষ করতে হবে।
বাবা জানতে চাইল- তুমি কোন বিষয়ে আঁকবে?
– বাবা, বাসায় ফিরে তোমাকে বলব। এখন নয়।
নির্ধারিত সময়ের আগেই অঙ্কনের ছবি আঁকা শেষ। মনে মনে সে এতো আনন্দিত যে স্বপ্না আপুকে না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পাবে না। বাবাকে অনুরোধ করে স্কুল শেষে সোজা স্বপ্নাদের বাসায় এলো অঙ্কন।
– আপু আমি কিন্তু পদ্মপাতায় জলময়ূরের দৃশ্যটা এঁকেছি। হাওড়ে বসে বলেছিলাম না তোমাকে, এটাও কিন্তু পরীক্ষা।
– ওরে অঙ্কন! তোর বৃদ্ধি দেখছি প্রতিদিনই তরতর করে বাড়ছে!
শ্রীমঙ্গল থেকে আসার পর এ্যাকুরিয়ামের মাছগুলো দেখলেই অঙ্কনের মনটা বিষণ্ন হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে জলময়ূরের স্বাধীন চলাফেরা আর এ্যাকুরিয়ামের ছোট্ট জায়গায় মাছগুলোর লড়াই নিয়ে ভাবে সে।
হঠাৎ করে অঙ্কন একটু ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হলো।
মা বললেন- আমি কিন্তু বুঝতে পারছি না তোমার ঠাণ্ডা লাগার কারণ কী?
– মা, স্বপ্নে আমি গতকাল সারারাত হাওড়ের পাড়ে বসে ছিলাম, সে কারণেই ঠাণ্ডা লেগেছে।
অঙ্কনের মা ওর শিশুমনের ভাবনা বুঝতে পারলেন। তাই আর কিছু না বলে শুধুই মুচকি হাসলেন।
আসলে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শীত জাঁকিয়ে বসেছে। এ সময় খালি পায়ে ফ্লোরে হাঁটাহাঁটির কারণেই অঙ্কনের ঠাণ্ডা লেগেছে। তবে মায়ের যতেœ দুদিনেই সুস্থ হয়ে উঠলো সে। এরই মধ্যে মায়ের ফোনে অঙ্কনের স্কুল থেকে ক্লাসটিচারের ফোন এলো। অঙ্কনের আঁকা ছবিটা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
পরদিন স্কুলে গিয়ে পুরস্কার হিসেবে একটি সনদ আর বই পেল অঙ্কন। সনদ আর জলময়ূরের ছবিটা একই ফ্রেমে বাঁধাই করে দেয়ার বায়না ধরলো সে। বাবা তাই করে আনলেন। তারপর এ্যাকুরিয়ামের পাশেই দেয়ালে বাঁধাই করা ছবিটা টাঙিয়ে রাখল অঙ্কন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়