নরসিংদীতে আটক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান

আগের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

পরের সংবাদ

গুলির পর কাউন্সিলরের মৃত্যু নিশ্চিত করে ‘জেল সোহেল’ : দাফন ও শেষকৃত্যে শোকার্ত মানুষের ঢল

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, কুমিল্লা : কুমিল্লায় কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মাদক কারবারি ও একাধিক মামলার আসামি শাহ আলম গুলি করে। এ সময় কাউন্সিলরের বুকে লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তার সহযোগী জেল সোহেল। গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী মাজেদুল হক বাদল গতকাল এ তথ্য জানান।
এদিকে ঘটনার পর সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকার দোকানপাট ও বিভিন্ন বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় আতঙ্কে সুজানগর এলাকার বাসিন্দা বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মচারী শাহীনুর ইসলাম হার্ট অ্যাটাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান বলে জানান তার ছেলে মো. সানজিদ ও শামীম। ঘটনায় আতঙ্কে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বাড়ি ফিরেনি।
এদিকে গতকাল বেলা ২টার দিকে কাউন্সিলর সোহেলের জানাজা এবং আওয়ামী লীগ নেতা হরিপদ সাহার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। বিকালে নগরীর সংরাইশ এলাকা থেকে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এসব অস্ত্র কিলিং মিশনে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা

গেছে, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কালো পোশাক, হেলমেট ও মুখোশ পরিহিত ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এ সময় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী মাজেদুল হক বাদলও অন্যদের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাদল গতকার জানান, র‌্যাব পরিচয়ে ওই সন্ত্রাসীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি গ্রুপ মাদক কারবারি শাহ আলমের নেতৃত্বে কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। শাহ আলমই প্রথম কাউন্সিলরের বুকে ও মাথায় গুলি চালায়। এ সময় কাউন্সিলর অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়লে তার সহযোগী জেল সোহেল লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে বলে মিশন কমপ্লিট। সন্ত্রাসীরা ওই কার্যালয়ে অবস্থানরত অন্যদের ওপরও এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। হাসপাতালে নেয়ার পর কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
বাদল আরো বলেন, কয়েক দিন আগে সন্ত্রাসী শাহ আলমের এক সহযোগী সাব্বির এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে ধাওয়ার মুখে পড়ে। এ সময় শাহ আলম ফাঁকা গুলি ছুড়ে সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেয়। এ বিষয়ে কাউন্সিলর সোহেল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে ক্ষিপ্ত হয় শাহ আলম। এর জেরেই তার নেতৃত্বে এ নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে বাদলের ধারণা।
কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহাকে যেখানে গুলি করা হয় ওই অফিসের সামনে রয়েছে তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশ ঘটনার পর রাতেই সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এসব ফুটেজ থেকে ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ নিয়ে পুলিশ কোনো মন্তব্য না করলেও স্থানীরা জানিয়েছেন, এলাকায় শাহ আলম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের বিরোধ চলছিল। শাহ আলম পেশায় মাদক কারবারি। সোহেল কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে শাহ আলমের মাদক ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া শাহ আলম গ্রুপের সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের বিভিন্ন কারণে বিরোধ চলছিল। সোমবার কালো মুখোশ পরে শাহ আলমসহ ৮-১০ জন সশস্ত্র ক্যাডার কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার খবর স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেলেও পুলিশ এখনো কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ক্যাডারদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি। এদিকে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর সোমবার রাতে নগরীর সুজানগরে ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সোমবার রাতে ওই এলাকায় অন্যদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের সময় সুজানগর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মচারী শাহীনুর ইসলামের বাড়িতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তার দুই ছেলে শামীম ও সানজিদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের সময় বাবা শাহীনুর ইসলাম ঘরে ছিলেন। এ ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। গতকালই তাকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহার লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে নগরীর টিক্কারচর শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতারা ছাড়াও এলাকাবাসী তার বাড়িতে ভিড় জমান। পরে বাদ জোহর পাথুরিয়াপাড়া মসজিদ-ঈদগাহ মাঠে সোহেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেয়। জানাজায় বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ শহীদ প্রমুখ। পরে তার লাশ মসজিদের পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়। কাউন্সিলর সোহেল ও আওয়ামী লীগ নেতা হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়